পি কে হালদারকে অন্তরঙ্গভাবে পেতে লড়াই ছিল দুই বান্ধবীর

Slider নারী ও শিশু

কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশ ছাড়বেন পি কে হালদার। সঙ্গে লম্বা, ফর্সা, আকর্ষণীয় চেহারার তরুণী। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দু’জন পাশাপাশি বসেছেন। কথা বলতে বলতে মেয়েটির হাতের ছোঁয়া লাগছে হালদারের হাতে। দু’জনের চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটির ঠোঁটে দেখা যায় মিষ্টি হাসির আভা। পি কে হালদারের মুখ বিষণ্ন। বিষণ্নতা কাটাতে চেষ্টা করেন তরুণী। কানের কাছে মুখ নিয়ে মিষ্টি করে কিছু একটা বলেন।

এবার পি কে হালদার কৃত্রিমভাবে হাসার চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে চেকড ব্যাগ ও ক্যারিঅন ব্যাগ ওজন করা হয়েছে। এয়ারলাইন্স কর্মকর্তার কাছে বোর্ডিং কার্ডসহ টিকিট। পাসপোর্টও এগিয়ে দিচ্ছিলেন। তখনই ঘটে ঘটনাটি। দ্রুত আরেক তরুণী সেখানে প্রবেশ করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পি কে হালদারের হাতটা শক্ত করে ধরেন। হালদারের সঙ্গে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকান। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেন। তারপর পি কে হালদারকে নিয়ে বাসায়। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তুমুল ঝগড়া হয় দু’জনের। এমনকি পি কে হালদারের গায়ে হাত তোলেন এই তরুণী। এই তরুণীর নাম নাহিদা রুনাই। অবন্তিকা বড়ালকে নিয়ে বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন পি কে হালদার। কিন্তু সেবার আর যাওয়া হয়নি। অবন্তিকা ও রুনাই। দেশের আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদারের দুই বান্ধবী। হালদারকে কাছে পেতে মরিয়া ছিলেন এ দু’জন। নিজের রূপ, যৌবন দিয়ে কাছে টেনে রাখতে চাইতেন। এ নিয়ে এক ধরনের যুদ্ধ চলছিল অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইয়ের মধ্যে। কিন্তু দু’জনকেই একান্তে চাইতেন পি কে হালদার। একজনের অজান্তে অন্যজনকে নিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতেন। চলে যেতেন দেশের বাইরে। অবন্তিকা ও রুনাইকে আলাদা আলাদাভাবে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন পি কে হালদার।

এসব বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন পি কে হালদারের সহযোগী পিপলস লিজিং’র চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দী। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে দেয়া তথ্য ও আদালতে দেয়া জবানবন্দি সূত্রে জানা গেছে দুই বান্ধবীর সঙ্গে পি কে হালদারের প্রেম-ভালোবাসা, অন্তরঙ্গতাসহ বেপরোয়া যৌন জীবন সম্পর্কে। বিপুল অবৈধ অর্থের মালিক পি কে হালদার অবাধে টাকা ব্যয় করতেন। যে কারণে তাকে শারীরিক-মানসিকভাবে সুখে রাখতে প্রতিযোগিতা থেকে এক ধরনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন অবন্তিকা ও রুনাই।

এসব বিষয় নিয়ে একবার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে গিয়ে পি কে হালদারের সঙ্গে নাহিদা রুনাই ঝগড়া করেন। বেশ চিৎকার করে কথা বলছিলেন। এমনকি রাতে পি কে হালদারের বাসায় গিয়ে তার রুম ভাঙচুর চালান নাহিদা রুনাই। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে যেতেন পি কে হালদার। কখনও তারকা হোটেলের কক্ষে ভাসতেন সুখের মোহনায়। স্বল্প পোশাকে বিচে বেড়াতে যাওয়া, গোসল করা, বারে ড্যান্স করা ছিল তার শখ। উজ্জল কুমার নন্দীসহ পি কে হালদারের সহযোগীরা রুনাইকে বড় আপা এবং অবন্তিকাকে ছোট আপা বলে সম্বোধন করতেন। রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং আর অবন্তিকা চালাতেন পিপলস লিজিং। পি কে হালদারকে ব্যবহার করে অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে রুনাই। কয়েক বছরে তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটি টাকার ট্রান্সজেকশন রয়েছে।

জবানবন্দিতে উজ্জল কুমার নন্দী বলেন, পি কে হালদার বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্ন দেশে প্রমোদের জন্য পাঠাতেন। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে গিয়েছি দুই-তিনবার। তিন বার গিয়েছি মালয়েশিয়াতে। এরমধ্যে দু’বার পি কে হালদারের সঙ্গে। উজ্জল কুমার নন্দী জানান, মালয়েশিয়াতে তার সঙ্গে ছিলেন অমিতাভ অধিকারী, রাজীব সোম। মূলত, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনায় জন্য পি কে হালদারের সঙ্গে দু’বার মালয়েশিয়াতে যান উজ্জল। একবার ফ্যামিলি ট্যুরেও যান। প্রতিবারই ভ্রমণের সকল খরচ দিয়েছেন পি কে হালদার।
এ সকল ভ্রমণে তার সঙ্গী হতেন রাজীব সোম, অমিতাভ অধিকারী ও অবন্তিকা বড়াল। এছাড়াও ভারতে গিয়েছেন সাত-আট বার।

উজ্জ্বল কুমার নন্দী জবানবন্দিতে আরো জানান, পি কে হালদার ২০১৪ সালে ১২৭ কোটি টাকা দিয়ে কক্সবাজার র‌্যাডিসন হোটেলটি ক্রয় করেন। পি, কে হালদার রিলায়েন্স লিজিং থেকে বিভিন্নভাবে ২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। পরে একই কায়দায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ বের করে রিলায়েন্সের দেনা পরিশোধের চেষ্টা করেন। এই অপকর্মে উজ্জল কুমারকে সহযোগিতা করেন হালদারের বান্ধবী নাহিদা রুনাই, আল মামুন সোহাগ, রাফসান রিয়াদ চৌধুরীসহ অনেকে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাই। তারপর থেকে পি, কে হালদারের কথামতো ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জীদের প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং ও এমটিবি মেরিনকে ঋণ দিই। প্রকৃতপক্ষে দিয়া শিপিং নামের কোনো কম্পানি নেই। ঋণের পুরো টাকাই এই দুই প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিভিন্ন ঋণ পরিশোধ হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি, ১৫৮টি ফাইল আমার সময়ে গায়েব হয়েছে। এজন্য জবানবন্দিতে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন উজ্জল কুমার নন্দী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *