রাজধানীর পূর্বজুরাইনে জাকির হোসেন খুনের ঘটনায় সাতজন ও মুগদায় কিশোর হাসান মিয়া হত্যায় কিশোর গ্যাং ‘ব্যান্ডেজ গ্রুপ’-এর সাত সদস্যসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত রোববার রাতে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতাকে কেন্দ্র করে জাকিরকে এবং সিনিয়রদের সালাম না দেয়া নিয়ে তর্কের জেরে হাসানকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, রাজধানীতে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০টি খুনের ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারি মাসেও দু’টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি ১০ তারিখে ও অন্যটি ১২ তারিখে সংঘটিত হয়। এ দু’টি ঘটনার পর জড়িত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মাহবুব আলম বলেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কদমতলীর পূর্বজুরাইনে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। একই ঘটনায় মজিবর রহমান ওরফে মোহন নামে আরো একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার পর কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এতে গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার আশপাশ এলাকা থেকে হত্যার সাথে জড়িত সাত আসামিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলোÑ শুক্কুর, নুরুল ইসলাম স্বপন, রতন ওরফে সোলাইমান ওরফে রোম্বে, শফিকুর রহমান ওরফে দীপু, ফাহিম হাসান তানভীর ওরফে লাদেন, তরিকুল ইসলাম ও মাসুদ পারভেজ। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, মাদক ও অস্ত্র আইনে বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
সালাম না দেয়ার জেরে খুন হয় কিশোর হাসান
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম আরো বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি মুগদার মান্ডা এলাকায় হাসান মিয়া (১৬) হত্যার সাথে জড়িত কিশোর গ্যাং ব্যান্ডেজ গ্রুপের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে সালাম না দেয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। গ্রেফতাররা সবাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি বলেন, মূলত সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ব্যান্ডেজ গ্রুপের সদস্যরা হাসানকে খুন করেছে। হাসান তাদের সালাম দেয়নি বলে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই কিশোর গ্যাং গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল তানভীর। তার সাথে আরো সাত-আটজন হত্যায় জড়িত।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মধ্যেই কিশোর গ্যাং তৎপর হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এসব গ্যাংকে দমন করে। তিনি বলেন, গ্যাং গ্রুপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছেÑ মূলত নি¤œ আয়ের পরিবারের সন্তানরা এ কিশোর গ্যাং কালচারের সাথে জড়িত। করোনার লকডাউনের সময় কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল। লকডাউনের পর তাদের আবার তৎপর হতে দেখা গেছে। তবে এলাকার মাদককারবারি ও কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোকে প্রতিরোধ করতে বিট পুলিশিংয়ের সদস্যদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ধনী পরিবারের সন্তানদের গ্যাং কালচারের সম্পৃক্ততা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে ধনী পরিবারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও মোটা দাগে নি¤œ আয়ের পরিবারের সন্তানরা বেশি জড়িত। এ ছাড়া এসব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক কেউ উসকানিদাতা থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
কিশোর অপরাধ নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি স্টাডি (গবেষণা) চলছে। স্টাডিতে কিশোররা কেন অপরাধে জড়াচ্ছে এবং তারা কোন পরিবার থেকে এসেছে এসবসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসবে।
জানা যায়, নিহত হাসান একটি প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী হিসেবে কাজ করত ও পরিবারের সাথে মান্ডা এলাকায় সাবেদ আলীর বাসায় ভাড়া থাকত। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভারারা গ্রামে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে হাসান তৃতীয় ছিল।