লজ্জিত আজ সাংবাদিক সমাজ। নামকরা দুই সাংবাদিক। সুখী দম্পতির ছিল এক সন্তান। শিশু সন্তানের সামনে বাবা- মাকে নৃশংসভাবে খুন করা হল। এরপর চলে গেলো ৯বছর। তদন্তসংস্থা পুলিশ রিপোর্ট জমা দিতে ৯ ব্ছরে ৭৮বার সময় নিল। এখনো রিপোর্ট আদালতে জমা হয়নি। যে মামলার তদন্ত রিপোর্ট ৯ বছরেও জমা পড়েনি সে মামলার বিচার কবে হবে বলা ঠিক হবে না। কারণ যে দেশে রাষ্ট্রপতি স্বপরিবারে হত্যার বিচার পেতে ৩৪ বছর লাগে যা ৪৩ বছরেও শেষ হয় না আর এই টুকু পেতে নিহতের সন্তানকে সরকার প্রধান হয়ে অপেক্ষা করতে হয়, কখন পিতামাতা হত্যার আসামীদের দন্ড কার্যকর হবে। সেদেশে মেঘের জন্য বিচার পেতে তো অপেক্ষা করতেই হবে। সুতরাং সাংবাদিক দস্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার তার ছেলে মেঘ কবে পাবে জানা নেই। তবে যদি শিশুটির ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তবে হয়ত বিচার পেতে পারে।
আজ মনে পড়ে, ২০১১ সালে আজকের দিনে যখন সাগর-রুনি খুন হন, তখন আমি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম-এ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলাম। এই নৃশংস ঘটনার পর দেশ যখন ঘৃনার ঘূর্নিঝড়ে উঠানামা করছে, তখন সর্বপ্রথম সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আটক প্রথম ও দ্বিতীয় সন্ধিগ্ধ আসামী আটকের খবরটি প্রকাশ করেছিল বাংলানিউজ। আর ওই খবরটি করেছিলাম আমি অধম। এই খবরের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম সরকারকে ঝাপটে ধরেছিল বাংলানিউজে প্রকাশিত খবরের সততা নিয়ে। সরকার আটককৃত আসামীদের আটকের খবর স্বীকার না করায় প্রধান সম্পাদক আলমগীর সাহেব আমাকে বার বার ফোন করেছিলেন বলা যায় একমত ভয়েই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলাম খবর সঠিক। পরে আসামীদের আদালতে তোলার পর আমি ধন্যবাদ পেয়েছিলাম সম্পাদক সাহেবের। এরপর সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা নিয়ে আমি অসংখ প্রতিবেদন করেছিলাম যা সরকার প্রধানের বক্তব্যকেও চ্যালেঞ্জ করে। সম্পাদক মহোদয় আমার কোন লেখা আটকাননি। আজকে কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ জানাই সম্পাদক আলমগীর হোসেন সাহেবকে। তিনি সূযোগ না দিলে সত্যগুলো প্রকাশ করা সম্ভব হত না আমার পক্ষে। আর বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই ঘটনার প্রথম সংবাদসংগ্রহকারী হিসেবে আমারো আবিস্কার হত না।
একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হিসেবে সহকর্মী সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় আসামী আটকের প্রথম খবরসংগ্রহকারী হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। একই সাথে মেঘের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি যে, তোমার বাবা-মা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে গিয়ে সহকর্মীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যদি কেউ বা কারা বড় লোক হয়ে থাকেন , তাদের অভিশাপ দিও। আর যারা সহযোগিতা করছেন তাদের জন্য দোয়া করো। আশির্বাদ করি মেঘ, তুমি একদিন না একদিন বিচার পাবেই। আর সেটা দুনিয়াতে বা আখিরাতে। আল্লাহ তোমার বাবা- মাকে বেহেশতবাসী করুন, আর তোমাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে বাবা- মার হত্যার বিচার নিশ্চিত করুন, আমিন।
লেখক
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম