গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায় রাজপথ কাঁপাচ্ছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। তাদের সামনে যে গণতন্ত্র আলো ছড়িয়েছিল, তা কেড়ে নিয়েছে সামরিক জান্তা। তাই এখন নেতৃত্বহীন অবস্থায়ই জনগণ নেমে পড়েছেন রাজপথে। তাদের এক দাবি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও। নেত্রী অং সান সুচিকে মুক্তি দাও। তাদের এ দাবিতে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মিয়ানমার। সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ধর্মঘট চলছে। রোববার পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছুড়ছে।
এদিন লাখো বিক্ষোভকারী রাজধানী নেপিডতে বিক্ষোভে অংশ নেন। কিন্তু সামরিক জান্তা দৃশ্যত তাদের দাবির পথে হাঁটবে না। তারা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেছে। বলেছে, জননিরপত্তায় হুমকি অথবা আইনশৃঙ্খলার প্রতি হুমকি এলে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে সরকার। এর আগে রোববার বিক্ষোভ করেছে এক লাখের বেশি মানুষ। ২০০৭ সালের পর এটাই সেখানে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ১লা ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী রক্তপাতহীন এক অভুত্থানের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ শীর্ষ নেতাকর্মীদের। তাদের অভিযোগ নির্বাচনে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তারা এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ক্ষমতা চলে গেছে সরাসরি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে। এরপর থেকেই সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট সহ তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেটি (এনএলডি) দলের সিনিয়র নেতাদের রাখা হয়েছে গৃহবন্দি করে।
এর প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকালে ধর্মঘটের ডাকে জেগে ওঠে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। লাখো জনতা সমাবেশ করে রাজধানী নেপিডতে। বড় বিক্ষোভ হয়েছে মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুনের মতো বড় বড় শহরে। এতে অংশ নিয়েছেন শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তারাও। এ সময় নেপিডতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি প্রয়োগ করেছে। এ অবস্থায় বিক্ষোভকারীদের চোখ ঘষতে দেখা যায়। একজন আরেকজনের সাহায্যে এগিয়ে যান। এমন একটি ভিডিও ধারণ করেছেন কাইওয়া জিয়ার ও। তিনি বলেছেন, কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের ওপর দু’টি গাড়ি থেকে গরম পানি স্প্রে করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিল জনতা। তবে সোমবার বিকালে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে বলে তিনি জানান। তবে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়ছিল। তখনও সেখানে রাখা ছিল জলকামান। এসব ঘটনায় অল্প কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে অন্য কোনো স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে অনলাইনে সেখানে কর্মরতদের কাজ ছেড়ে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে যোগ দিয়েছিলেন ২৮ বছর বয়সী গার্মেন্টকর্মী হনিন থাজিন। তিনি বলেছেন, সোমবার ছিল তার অফিস খোলা। ফলে তার বেতন কর্তন হবে। তা সত্ত্বেও তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
বিবিসি’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি জোনাথন হেড বলেছেন, সপ্তাহান্তে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিক্ষোভ গত সপ্তাহের অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে গতি এনেছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নেতৃত্ব কে দিচ্ছেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। এখন পর্যন্ত এই বিক্ষোভ হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত। তাদের বিরুদ্ধে কি অবস্থান নেয়া হবে সে বিষয়ে পুলিশ দৃশ্যত দ্বিধাদ্বন্দ্বে।