নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার মূল্যের একটি মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগে প্রতিবাদে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে যেকোনো মূল্যে ‘জীবন দিয়ে হলেও’ মেয়র ও তার পরিবারের কবল থেকে ওই মন্দিরেরর সম্পত্তি উদ্ধারে কঠোর শপথ নেন প্রতিবাদকারীরা।
শনিবার বিকেলে শহরের দেওভোগ এলাকায় জেলা হিন্দু সম্প্রদায় ব্যানারে আয়োজিত ‘শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির’ ও মন্দিরের দাবিকৃত সম্পত্তি জিউস পুকুরকে এলাকায় অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বক্তারা বলেন, মন্দিরের সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহাসহ অনেকেই মামলার আসামি হয়েছেন।
ওই সময় হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে জিউস পুকুর ঘেরাও করে সমাবেশে একাত্মা ও সংহতি প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ নগরী স্থাপনের সময়কালে শ্রী ভিকন লাল ঠাকুর শহরের দেওভোগ আখড়া এলাকায় দেবতা লক্ষ্মীনারায়ণের নামে ‘শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। শত বছর ধরে এই মন্দির নারায়ণগঞ্জের লাখো হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাছে পবিত্র ও শুদ্ধার কেন্দ্র। স্বর্গবাসী ভিকন লাল পান্ডে মন্দিরটির পাশে পূজা-অর্চনা ও আশপাশের অধিবাসীদের সুবিধায় ৩৬৭ শতাংশ জমির ওপর একটি পুকুর খনন করান, যা স্থানীয়দের কাছে জিউস পুকুর নামে পরিচিত। কিন্তু আমাদের এই মন্দিরের সম্পত্তি নাকি এখন আইভী ও তার পরিবারের সম্পত্তি।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদল বলেন, ‘আপনাদের সাথে আমি ভিপি বাদল আছি। শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, খোকন সাহা আছে। যারা যারা মসজিদে যায়, মন্দিরে যায়, গীর্জায় যায়, প্যাগোডায় যায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মেয়র কথা বললে ভয় পাবেন না। কেউ যদি দলে থেকে দলের বদনাম করেন, আপনারা তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মাটিতে মেয়র নমিনেশন চাওয়ার আগে দেবোত্তর সম্পত্তিটা লিখে দেন। তা নাহলে আপনারা কী তাকে ভোট দিবেন? দলের বদনাম কইলে শুনবেন? নৌকায় বদনাম করতে দেয়া যাবে না।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল চ্যাটার্জী বলেন, নকল দলিল করে হিন্দু সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে মেয়র আইভীর মা, দুই ভাই এবং আত্মীয়-স্বজনের নাম রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, ‘মন্দিরের সম্পত্তি দখলের বিষয়ে আইভী বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলায় মেয়র আইভী আমার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেছেন।’
তিনি আইভীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভোটের সময় সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ভোট প্রার্থনা করনে। আর ভোট চলে গেলে এখন মন্দিরের সম্পত্তিতে সিঁদ কাটতে এসেছেন। আপনার সিঁথিতে সিঁদুরের নেপথ্যে জানতে আমাদের আর বাকি নেই। ধর্ম নিয়ে নাটক কোনো ধর্মই পছন্দ করে না।’
ওই সময় আবেগআপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ২৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। মেয়র আইভীর আপনি কখনো মসজিদ, কখনো মন্দির, আবার কখনো বঙ্গবন্ধু হাতে উদ্বোধনকৃত স্কুল ভেঙ্গে দেন। আপনি নাকি আওয়ামী লীগ করেন। যখন দেখি আপনার এসব কাণ্ডে প্রাণের দল আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন আর চুপ থাকতে পারি না।’
নারায়ণগঞ্জ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শীল বলেন, ‘আমরা জানলাম মেয়র আইভী শুধু মন্দিরই নয় মসজিদের জায়গা অপসারণ ও মাদরাসা উচ্ছেদ করেছেন। নিজের পছন্দমতো মাসদাইর কবরস্থান মসজিদে ইমাম নিয়োগ দিয়েছেন। ডিআইটি মসজিদের খতিব নিজেও এসব বক্তব্য দিয়েছেন। আপনি আওয়ামী লীগ করে দলকে আর বিতকির্ত করবেন না।’
গণসমাবেশে সভাপত্বি করেন নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার সাহা। সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে সেখানে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড.মহসিন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহাবুবুর রহমান, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবু হাসনাত বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও অরাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।