সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসু মন তথ্য তো খুঁজবেই। এতে অপরাধের কিছু দেখছি না। সাংবাদিককে সুযোগ করে দিলে সে তো তথ্য প্রকাশ করবেই বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ফেনীর নুসরাত জাহান রাফীর ভিডিও প্রকাশ সংক্রান্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেন।
আদালতের শুনানিতে মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী মুরাদ রেজা বলেন, ‘মাই লর্ড, মোয়াজ্জেম হোসেন ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেনি। তার মোবাইলে করা ওই ভিডিওটি একজন সাংবাদিক ওসির মোবাইল থেকে নিয়ে প্রকাশ করেছে। তাই এক্ষেত্রে ওসির কোনো অপরাধ নেই। যদি অপরাধ হয় তাহলে সেটা ওই সাংবাদিকের। কারণ সে ভিডিওটা প্রকাশ করেছে।
উত্তরে আদালত বলেন, সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসু মন তথ্য তো খুঁজবেই, এতে অপরাধের কিছু দেখছি না। সাংবাদিককে সুযোগ করে দিলে সে তো তথ্য প্রকাশ করবেই। এ সময় আদালত মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন ওসি একটি থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। সে কোনো সাধারণ কেউ না। তাহলে সে কেন তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ভিডিও ধারণ করলো? আমরা তো তার ওই ভিডিও ধারণ করাটাকেই অপরাধ হিসেবে দেখছি। আর বিচারিক আদালত তো এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সাজার রায় দিয়েছেন। এরপর আদালত শুনানি শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলায় দণ্ডিত সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন আগামী তিন মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা। তার সঙ্গে ছিলেন রেদওয়ান আহমেদ রানজীব। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম। পরে আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ রানজীব সাংবাদিকদের বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ই আগস্ট আদালত মোয়াজ্জেম হোসেনের আপিল গ্রহণ করে। আদালত জামিন না দিয়ে আবেদনটির শুনানি আগামী তিন মাসের জন্য মুলতবি করেন।
২০১৯ সালের ২৮শে নভেম্বর মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে দু’টি ধারায় আরো ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। রায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় মোয়াজ্জেমকে ৫ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ছয় মাস কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া আইনের ৩১ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মোয়াজ্জেমকে খালাস দেয়া হয়। সাজা ধারাবাহিকভাবে কার্যকর হবে বিধায় ওসি মোয়াজ্জেমকে ৮ বছরই কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এরপর হাইকোর্টে আপিল করেন মোয়াজ্জেম হোসেন। হাইকোর্ট তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পরে তিনি সেই আপিলে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।