যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াবে যেখানেই তা হামলার মুখোমুখি পড়বে।’
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান ও দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির গ্রেফতারির পরিপ্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে এই কথা বলেন তিনি। সাথে সাথে সেনাবাহিনী তার পদক্ষেপ থেকে সরে না আসলে দেশটির ওপর আবার নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন বাইডেন।
এর আগে সোমবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে।
নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বেসামরিক প্রশাসনের সাথে সামরিক বাহিনীর কয়েক দিনের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এই অভ্যুত্থান ঘটে।
সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর উচিত নয় জনগণের ইচ্ছার বিপরীতে যাওয়া বা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ফলাফলকে পাল্টানোর চেষ্টা করা।’
মিয়ানমারে গণতন্ত্রের উত্তরণের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে দেশটির ওপর সামরিক শাসনের কারণে দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিবৃতিতে জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার পদক্ষেপ থেকে সরে না আসলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে চিন্তা করা হবে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিরুদ্ধে ভয়াবহ আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। অভ্যুত্থানের জেরে অন্তত ৪৫ রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সুচির গ্রেফতারি অবৈধ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা একইভাবে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারে সব পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে চীন। প্রতিবেশি কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনস সেনা অভ্যুত্থানকে মিয়ানমারের ‘আভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে মন্তব্য করেছে।
সোমবার সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। শহরের সড়কে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা রয়েছে এবং রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে।
এ দিকে অং সান সুচি তার সমর্থকদের সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছেন।
গ্রেফতারির আগেই লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপ দেশটিকে আবার একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে নেবে।
সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক মন্ত্রীদের পদচ্যুত করে সেনা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তার সাধারণ মানুষ মনে করছেন, গণতন্ত্রের জন্য তাদের কষ্টার্জিত অর্জন ব্যর্থ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২৫ বছর বয়সী এক ইয়াঙ্গুন বাসিন্দা বলেছেন, ‘আপনার পরিচিত জগতের রাতারাতি পরিবর্তন কোনো নতুন অনুভূতি নয়, কিন্তু আমি মনে করেছিলাম এই অনুভূতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। আমি কখনো ভাবিনি এই অনুভূতিতে আমাদের ফিরে যেতে বাধ্য করা হবে।’
২০১১ সাল পর্যন্ত সেনা শাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারে অং সান সুচির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এর আগে, ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দিত্বে ছিলেন সুচি। গণতন্ত্রের জন্য তার সংগ্রামের কারণে ১৯৯১ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় করেন।
কিন্তু ২০১৫ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম অধিবাসীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সুচি আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যথার্থ ব্যবস্থা ও প্রতিবাদ জানাতে ব্যর্থতায় সাবেক সমর্থকরা তার নিন্দা করেছিলেন।
সোমবার অভ্যুত্থানের সূচনাতে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল থেকে জানানো হয়, দেশটির সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ অধিনায়ক মিন অং লাইং ক্ষমতা অধিকার করেছেন।
সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) অন্য নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কোথায় রাখা হয়েছে এই বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা এখনো জানা যায়নি। সেনাবাহিনী রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলসহ আন্তর্জাতিক ও দেশীয় টিভি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট ও ফোন যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বিভিন্ন অফিস-আদালত ও ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়েছে।
পরে সামরিক বাহিনী ২৪ মন্ত্রীকে ও তাদের সহকারীকে পদচ্যুত করার ঘোষণা দিয়েছে। একইসাথে অর্থ, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রসহ নতুন ১১ মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সেনাসমর্থিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে পরাজয়ের পর সেনাবাহিনী ও সুচির এনএলডি সরকারের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়।
সেনাসমর্থিত দল নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করে। মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
সূত্র : বিবিসি