রাজধানীর ৫টি সরকারি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনা ভ্যাকসিন উদ্বোধনের পরের দিন পর্যবেক্ষণমূলক এসব হাসপাতালে ২ প্রতিমন্ত্রী, ২ সচিবসহ মোট ৫৪১ জন টিকা নিয়েছেন। এইদিন টিকা গ্রহণকারী তালিকায় ভিআইপি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান ও তথ্য সচিব খাজা মিয়া।
এদিকে, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পরিচালিত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আনন্দঘন পরিবেশে টিকা দান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন, অনেকেই টিকা নিতে আসছেন। পরিবেশ দেখে মনে হলো ঈদের ভাব।
যেভাবে ঈদ হয়, সে রকম আনন্দমুখর পরিবেশে টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে। এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তারা সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। এখন পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শুনিনি। তিনি কোনো ধরনের ভয় না পেয়ে টিকা নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। করোনা নিয়ে সব ধরনের গুজব মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বলেন, যারা সুরক্ষা অ্যাপে আবেদন করতে পারবে না তারা টিকাদান কেন্দ্রে এসে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাস টিকা কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের আনা ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এখন পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে অক্সফোর্ডের উৎপাদিত ভ্যাকসিনটিই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর। করোনা চিকিৎসায় সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী আরো বলেন, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আমাদের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। তিন থেকে চার পার্সেন্টের বেশি আক্রান্ত হচ্ছে না এবং মৃত্যুর হারও অনেক কম। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি মৃত্যু হচ্ছে না। আমাদের লক্ষ্য মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
সকাল সাড়ে ১০টার পর বিএসএমএমইউতে করোনার টিকা নেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটি গোষ্ঠী টিকা নিয়ে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের জবাব দিতেই আমি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছি। সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনা টিকা নেয়ার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনা টিকা নেয়ার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে যাদের এনআইডি নম্বর সার্ভারে সংরক্ষিত নম্বরের সঙ্গে মিলছে না, তাদের টিকার আবেদন গ্রহণ হচ্ছে না। ভ্যাকসিন গ্রহণ শেষে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণের ২০ মিনিটের মধ্যেই আমি আমার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করেছি। কোনোরকম অসুবিধাই হয়নি। কোনো ধরনের মিথ্যা গুজবে কান না দিতে তিনি সকলকে অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায়, গতকাল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৩৮ জন চিকিৎসক ও ৩ জন নার্সসহ মোট ৫৮ জন টিকা নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৯ জন এবং নারী ৯ জন। বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় দেশের করোনা ভ্যাকসিনের কার্যক্রম। দ্বিতীয় দিনে এই হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ১০০ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসক ৫০ জন, নার্স ১৩ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৩৭ জন। পুরুষ ৫৯ জন এবং নারী ৪১ জন টিকা নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকা নিয়েছেন ১২০ জন। ভিআইপি হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ টিকা গ্রহণ করেন এই হাসপাতালে। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন। ঢামেকে প্রথম টিকা নেন ডা. ফরহাদ হাছান চৌধুরী মারুফ। এখানে ৫৪ জন চিকিৎসক,৭ জন নার্স এবং ৫৮ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনার টিকা নিয়েছেন। পুরুষ ১০০ জন ও নারী ২০ জন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৬৫ জন। এর মধ্যে চিকিৎসক ১২ জন, নার্স ৫ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৪৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন ও নারী ১০ জন। এদিন মুগদা হাসপাতালে প্রথম টিকা নেন ডা. নন্দিতা পাল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনার টিকা নিয়েছেন ১৯৮ জন। এদের মধ্যে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া, বিএসএসএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ আছেন। বিএসএসএমইউ’র ভিসি প্রথম টিকা নেন। এছাড়া টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক ১৪২ জন, নার্স ৪ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৪৮ জন।