প্রায় ১০ মাসের বিরতির পর ক্লাসে ফিরতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রাখা হয়েছিল শ্রেণিকক্ষের দরজা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। ঘোষণা দেয়া হয়েছে ৪ঠা ফেব্রুয়ারির পর খোলা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শীতকালে করোনাভাইরাসের আঘাতের শঙ্কা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয় কয়েক দফা। এরপর ক্লাসে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি সচিবালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হতে পারে।
সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাধিক শিফটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হবে। এ সময় দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও খুলে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হলেও আগের মতো একসঙ্গে সবার ক্লাস নেয়া হবে না। একাধিক শিফট করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বাকি ক্লাসগুলো সপ্তাহে একদিন করে নিতে নির্দেশনা দেয়া হবে। সব বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়া হবে।
কিন্ডারগার্টেন স্কুল খোলার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা (কিন্ডারগার্টেন) চাইলে যেকোনো সময় খুলতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো বাধা-নির্দেশ নেই। তারা আমাদের নিবন্ধন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে না, তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তবে নিবন্ধিতরা তাদের প্রতিষ্ঠান খুলতে চাইলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিন্ডারগার্টেন স্কুল খুলে দিতে পারবে।
দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো আগে থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গত সোমবার মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় দেশের সব দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে খোলার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পাঁচ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসতে পারবে। পাঁচ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দু’জন শিক্ষার্থী বসার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন ও নিরাপদ শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে মাদ্রাসাগুলোকে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোও ৪ঠা ফেব্রুয়ারির পর যেকোনো দিন খুলে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসবে সপ্তাহে একদিন। তারা সপ্তাহে একদিন এসে পুরো সপ্তাহের পড়া নিয়ে যাবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৫-৬ দিন স্কুলে আসবে। শিক্ষার্থী বেশি হলে পালা (শিফট) করে আসবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তিন ফুট দূরুত্ব মেনে ক্লাসে বসবে তারা। এর সবকিছুই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির মতামত নিয়ে করা হবে। এ কমিটির পরামর্শ না পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী গত রোববার বিকালে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী গত সোমবার রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)-এ এক অনুষ্ঠানে বলেন, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তিন থেকে চার মাসে প্রস্তুতি নেয়া যাবে এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। যার ভিত্তিতে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে শিক্ষার্থীরা তিন-চারমাস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পাবেন। অটো পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনোরকম স্বাস্থ্য বিধি না মেনে আপনারা যেভাবে আন্দোলন করছেন এই ক্ষেত্রে বরং করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সব রকমের স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
আর ২০২০ সালের এইচএসসি’তে ‘অটোপাস’ পাওয়া শিক্ষার্থীরা যেকোনো দিন ফল পেয়ে যাবেন। ফল প্রকাশের আইনি বাধা কেটে গেছে। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এ সংক্রান্ত তিনটি বিলে সম্মতি দিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এইচএসসি মূল্যায়নের ফল সরকার নির্ধারিত তারিখে প্রকাশ করা হবে। প্রসঙ্গত, দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। ২০২০ সালের ১লা এপ্রিল থেকে তাদের সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসি’র ফল ঘোষিত হবে।
স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে বারবার ঘোষণা আসলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে জরুরি ভিত্তিতে কিছু তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, হলের আসন ও আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি। ইতিমধ্যে এসব তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছে ইউজিসি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিসেম্বর থেকে চলছে পরীক্ষা। তবে বন্ধ রয়েছে হলের দুয়ার। এ বিষয়ে ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলবে। তারা নিজেরাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা শুধু বৈঠক করে পরামর্শ দেবো। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে হলও খুলতে হবে। আমার পরামর্শ থাকবে, একসঙ্গে না খুলে পর্যায়ক্রমে খুলতে। প্রথমে সীমিত আকারে খুলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শও দেন তিনি।