অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসছে আজ। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে এই টিকা আসছে। সকাল ৮টায় টিকা নিয়ে ভারত থেকে বিশেষ ফ্লাইট যাত্রা শুরু করবে। বেলা সাড়ে ১১টায় তা ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। বিমানবন্দর থেকে টিকা নিয়ে রাখা হবে টঙ্গিতে বেক্সিমকোর ওয়্যার হাউজে। গতকাল রাতে বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন দেশে আসার পর ল্যাব টেস্টের পর স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সময়মতো দেশের ৬৪ জেলায় পৌঁছে দেয়া হবে।
ভারত সরকার যে দামে ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশও একই দামে পাচ্ছে উল্লেখ করে পাপন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশই সবচেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পাচ্ছে।
ভারত সরকার এখন তিন ডলার মূল্যে ভ্যাকসিন নিচ্ছে। বাংলাদেশও হয়তো এই দামে পাবে। যদিও চুক্তিতে চার ডলার উল্লেখ আছে। এছাড়া যদি চার ডলারের বেশি দামে ভারত নেয় তবে বাংলাদেশকে কিন্তু বেশি দিতে হবে না। চুক্তিতে তাই বলা আছে। তিনি বলেন, সিরাম থেকে বেক্সিমকো কোনো কমিশন পাবে না। বেক্সিমকো সরকারকে ভ্যাকসিন দিচ্ছে। সরকার থেকে কমিশন নেবে। তবে ভ্যাকসিন এনে বেক্সিমকো লাভবান হচ্ছে এটি বলা যাবে না। কারণ ক্ষতিও হতে পারে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে তিন কোটি ডোজ টিকা বুঝিয়ে দিতে হবে। সরকার এই তিন কোটির মূল্য পরিশোধ করবে। কিন্তু যে টিকা নষ্ট হবে বা বাতিল হবে তার দায় বেক্সিমকো নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে পাপন বলেন, অক্সফোর্ডের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব একটা নেই। টিকা নেয়ার পর কোথাও কেউ হাসপাতালে গেছে এমন তথ্য নেই। তবে যেহেতু সরকার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে তাই কারো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে সেই দায় সরকার নেবে। এজন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা রয়েছে।
পাপন জানান, এই মুহূর্তে বেক্সিমকো বাণিজ্যিকভাবে কোনো টিকা আনছে না। কয়েকদিনের মধ্যে আরো ১০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। যা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে জড়িতদের দেয়া হবে। ওষুধ শিল্প সমিতির মাধ্যমে এগুলো দেয়া হবে। তা বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
পাপন বলেন, সরকার আমাদের ৬৪ জেলার করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়ার কথা বলেছে। আমরা প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনের কাছে ভ্যাকসিন হস্তান্তর করবো। সরকার যেখানেই বলবে আমরা সেখানেই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেবো। সরকারের করোনার টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নাম নেই। কিন্তু যারা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ করোনাকালে আমরা একদিনও কারখানা বন্ধ রাখতে পারিনি। উৎপাদিত ওষুধ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতে হচ্ছে। তাই করোনার টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রতিনিধিদের নাম রাখার পক্ষে তিনি।
তিনি নিজে ভ্যাকসিন নেবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনিও ভ্যাকসিন নিতে চান। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্যাকসিন নেবেন। পাপন বলেন, বেক্সিমকোর আনা করোনার ভ্যাকসিন বাণিজ্যিক নয়। এই ভ্যাকসিন বাইরে কিনতে পাওয়া যাবে না।
আজ দেশে ভ্যাকসিন আসার পর আগামীকাল থেকে শুরু হতে পারে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে এই ভ্যাকসিন নিতে হবে। আগামী বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে টিকাদান শুরু হবে। এদিন আরো ২৪ জনকে টিকা দেয়া হবে। এরপর ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা ৫০০ শয্যা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে করোনা টিকা দেয়া হবে। ৮ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশে টিকাদান শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।