বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে টিকা পাঠানোর বিষয়টি অগ্রাধিকারে থাকলেও এই মুহূর্তে কাছের বা দূরের কোন বন্ধু রাষ্ট্রের অনুরোধই রাখতে পারছে না ভারত। দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবের বরাতে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদ মাধ্যম শুক্রবার এ খবর দিয়েছে। শনিবার থেকে ভারতজুড়ে করোনা টিকা প্রদান কর্মসূচী শুরুর কথা। কলকাতার প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আনন্দবাজারও প্রায় অভিন্ন তথ্য প্রচার করেছে। আর ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্টে দিল্লির অপারগতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার পেয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়, দিল্লির মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, এই মুহূর্তে ভারতের টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ততা চলছে, তার প্রস্তুতি চলছে, এখনো সব জায়গায় পুরো ডোজ পৌঁছায়নি। অথচ রাত পোহালে (শনিবার) টিকাদান শুরু হয়ে যাবে। সুতরাং এই মুহূর্তে বিদেশের অনুরোধ মানা সম্ভব হবে না।
যদিও ভারত বলেছে, ভারতে তৈরি টিকা যাতে সব দেশই পায় ভারত তার ব্যবস্থা করবে। সেক্ষেত্রেও প্রতিবেশী দেশগুলোকে যে অগ্রাধিকার দেয়া হবে, সেটাও ভারত আগে জানিয়ে দিয়েছে। তবে এখনই প্রতিবেশী কিংবা দূরদেশি কাউকেই দেয়া যাবে না। ঠিক কবে দেয়া যাবে তাও বলা যাচ্ছে না। রিপোর্টে প্রকাশ- করোনার প্রতিষেধক দেয়ার ব্যাপারে ভারতকে চাপে রাখতে ব্রাজিল সরাসরি ভারতে একটি বিমান পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলেছে। সেই বিমান মুম্বাইয়ে গিয়ে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কুড়ি লক্ষ ডোজ করোনা প্রতিষেধক বিশেষ কন্টেইনারে করে নিয়ে আসবে বলে ব্রাজিলের বিদেশ দপ্তর বিবৃতি দিয়েছে। এর আগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে একটু তাড়াতাড়ি যাতে করোনা টিকা পাওয়া যায় তার অনুরোধ করেছিলেন। ব্রাজিল সরাসরি সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে দুই লক্ষ ডোজ করোনা প্রতিষেধক কিনেছে। তার দামও মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদি যেমন বলেছেন, আমরা অবশ্যই মানবিকতার খাতিরে সব দেশকে এই টিকা সরবরাহ করবো। তবে আমাদের নিজেদের জায়গাটা গুছিয়ে নিয়ে তারপর।
ওদিকে আনন্দবাজারের রিপোর্টে ভারতে টিকা দান কর্মসূচীর প্রস্তুতির বিষয়টি যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি ঘাটতির বিষয়টিও স্থান পেয়েছে। বলা হয়েছে, ভারতের আমজনতা কবে করোনার প্রতিষেধক পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে ব্রাজিল বিবৃতি দিলো, করোনার ২০ লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক নিয়ে যেতে ভারতে তারা বিমান পাঠাচ্ছে। সেই প্রতিষেধক নাকি ১৬ তারিখে ব্রাজিলে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, এখনই অন্যান্য দেশে প্রতিষেধক পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।
রিপোর্ট মতে, এ কথা ঠিক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রাজিলকে প্রতিষেধক দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জ়াইর বোলসোনারো সম্প্রতি মোদীকে দ্রুত প্রতিষেধক পাঠানোর আর্জি জানান। কিন্তু এবার ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এদুয়ার্দো পাজ়ুয়েলো জানিয়েই দিয়েছেন, অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ‘কোভিশিল্ড’ প্রতিষেধকের ২০ লক্ষ ডোজ় তাঁদের সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকারও দাবি, এই মাসেই তাদের প্রতিষেধক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিরাম। যদিও পুণের সংস্থাটি এ নিয়ে মুখ খোলেনি।
সিরামের সিইও আদার পুনাওয়ালা এর আগে বলেছিলেন, মার্চ নাগাদ তাঁরা বিদেশে প্রতিষেধক পাঠাতে পারবেন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, ভারত কোন দেশকে কবে প্রতিষেধক পাঠাতে পারবে, তা এত তাড়াতাড়ি বলা সম্ভব নয়। ব্রাজিলের বিমান পাঠানোর প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানায়, ব্রাজিল বিমান পাঠালেও দিল্লি এখনই (প্রতিষেধক) দিচ্ছে না।