করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আরো দু’টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পাওয়া গেছে। এই দু’টি ওষুধ অবশ্য আগে থেকেই অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি (জ্বালা-পোড়া) ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওষুধ দু’টি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের রোগীদের আইসিইউয়ে অবস্থানের সময় দেয়া হতো ভেতরে জ্বালা-পোড়া (প্রদাহ) কমানোর জন্য। এ দু’টি ওষুধই শিরার মাধ্যমে স্যালাইনের মতো ফোঁটায় ফোঁটায় শরীরে দেয়া হয়। দু’টি ওষুধের একটি হলো টোসিলিজুম্যাব এবং অন্যটি স্যারিলুম্যাব।
করোনায় আক্রান্ত আইসিইউয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের এই দু’টি ওষুধ প্রয়োগে চতুর্থাংশ মৃত্যু কমিয়ে দিতে পারে। ওষুধ দু’টি ইতোমধ্যে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে এবং গত ৭ জানুয়ারি থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের দেয়ার জন্য ব্রিটেনের সর্বত্র পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে বিবিসিসহ ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এ ছাড়া ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও ওষুধ দু’টি ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। মৃত্যু কমানোর পাশাপাশি এই দু’টি ওষুধ প্রয়োগে মারাত্মকভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউয়ে সাত দিনের বেশি থাকতে হয় না। এই দু’টি ওষুধ একই রকম কাজ করে। আইসিইউর রোগীদের মৃত্যু কমিয়ে দিতে পারে এমন একটি সস্তা ওষুধ ডেক্সামেথাসোন আইসিইউয়ের রোগীদের দেয়া হচ্ছিল। ডেক্সামেথাসোন সস্তায় প্রাপ্ত একটি স্টেরওয়েড ধরনের ওষুধ। বাংলাদেশেও আইসিইউয়ে ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ করছেন চিকিৎসকরা।
মৃত্যু কমিয়ে দিলেও ওষুধ দু’টির দাম কিন্তু কম নয়, এ দু’টি ওষুধ খুবই ব্যয় বহুল। ব্রিটেনেই ওষুধটি প্রয়োগে প্রতিটি রোগীর পেছনে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে সাত শ’ (৮৬ হাজার টাকা) থেকে এক হাজার পাউন্ড (এক লাখ ১৫ হাজার টাকা)। ফলে ব্রিটেনেই প্রতিটি রোগীকে এই ওষুধ ব্যবহারের পর আইসিইউয়ের জন্য খরচ হচ্ছে দৈনিক দুই হাজার পাউন্ড (দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা)।
এই ওষুধটির প্রধান গবেষক ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক অ্যান্থনি গর্ডন বিবিসিকে বলেন, ‘আইসিইউতে চিকিৎসাধীন প্রতি ১২টি রোগীকে এই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করলে একজন রোগীকে বাঁচানো যাচ্ছে। এটা একটা বড় পাওনা।’ এই গবেষণা ব্রিটেনসহ ছয়টি দেশের ৮০০ স্বেচ্ছাসেবকের ওপর করা হয়েছে। ফলাফলে বলা হয়েছে, প্রচলিত চিকিৎসায় ৩৬ শতাংশ আইসিইউয়ের রোগী মারা গেছে। কিন্তু আইসিইউ-এ প্রবেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন দু’টি ওষুধ প্রয়োগের কারণে ২৭ শতাংশ মৃত্যু কমানো গেছে।
উল্লেখ্য টোসিলিজুম্যাব ও স্যারিলুম্যাব প্রয়োগ করলে করোনায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীদের শরীরের ভেতরের জ্বালা-পোড়া কমিয়ে দেয়। ঠিক এ কারণেই ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া করোনা রোগীরাও রক্ষা পায়। ব্রিটেনের চিকিৎসকরা করোনায় আক্রান্ত যে কোনো রোগীকেও এই দু’টি ওষুধ দেয়ার সুপারিশ করেছেন। এমনকি ডেক্সামেথাসোন পেয়েছে এমন রোগীদেরও এই দু’টি ওষুধ দেয়া যাবে। ইতোমধ্যে টোসিলিজুম্যাব ও স্যারিলুম্যাব রফতানি করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। তবে এ গবেষণাটি এখনো পিয়ার রিভিউ অথবা কোনো জার্নালে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু এমইডিআরএক্সবআইভি নামক সাইটে এর গবেষণার একটি প্রিপ্রিন্ট অ্যানালাইসিস পাওয়া যাচ্ছে।
এর আগে ডেক্সামেথাসোন ছাড়াও অ্যান্টি ভাইরাল মেডিসিভিরও প্রয়োগ করা হয়েছে আইসিইউর চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের। বলা হয়েছে, রেমডিসিভির প্রয়োগ করোনা রোগীদের হাসপাতাল অবস্থান ৪ থেকে ৫ দিন কমিয়ে দেয়। তবে রেমডিসিভির প্রয়োগ মৃত্যু কমাতে পারে না। কিন্তু আলোচ্য টোসিলিজুম্যাব ও সিরিলুম্যাব আইসিইউয়ের করোনার রোগীদের প্রয়োগ করা হলে মৃত্যু কমিয়ে দিতে পারে এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত