সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি : জেমস ক্যামেরুন মানেই অসাধারণ আর ব্লকবাস্টার সব চলচ্চিত্র। ক্যামেরুন নির্মিত সবচাইতে আলোচিত, বিখ্যাত আর নজরকাড়া ব্যয়বহুল সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম টাইটানিক। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার মূল গল্প গড়ে উঠেছিল টাইটানিক জাহাজকে কেন্দ্র করে।
টাইটানিক জাহাজ। যার প্রথম যাত্রাতেই আটলান্টিক সাগরের ঠান্ডা পানিতে ডুবে গিয়েছিল আর হয়েছিল অনেকগুলো প্রাণের অকাল মৃত্যুর কারণ। খুব কম মানুষেরই ভাগ্য হয়েছিল অন্ধকার আর শীতল ভয়ের সেই রাতটাকে পেরিয়ে পরের দিনের ভোরের আলো দেখার। আর সেই কয়েকজন সৌভাগ্যবানের ভেতরেই ছিলেন রোজ নামের একটি মেয়ে। যে কিনা বেঁচে ফিরেছিল কেবল জাহাজে খুঁজে পাওয়া নিজের ভালোবাসার মানুষ জ্যাকের মৃত্যুর মাধ্যমে। ছবিটিতে রোজের চরিত্রে অভিনয় করেন কেট উইন্সলেট আর জ্যাকের ভূমিকায় লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও।
ওই সময় কেন, এখনো জনপ্রিয় এ সিনেমাটি। খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যারা রোজ আর জ্যাকের ভালোবাসার গল্পে বোনা এই সিনেমাটির নাম শোনেননি। ২০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই ছবিটি বিলিয়ন ডলার আর নানারকম নামী-দামী পুরস্কার নিজের ঝুড়িতে ভরলেও এর নির্মানের পেছনে ছিল বেশ কিছু মজার ঘটনা। আসুন জেনে নিই বিশ্ববিখ্যাত এই চলচ্চিত্রটির অজানা দিকগুলো।
১. সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায় রোজকে রুথ জামার পেছন দিকটা বেশ শক্ত করে আটকে দিচ্ছে আর এর মাধ্যমে রোজের বন্দীত্বকে নীরবভাবে বোঝাচ্ছে। যদিও প্রথমে এই ব্যাপারটা স্ক্রিপ্টে ছিল না এবং পুরোপুরি ভিন্ন একটা দৃশ্য ছিল ওটা। পরে জেমস ক্যামেরুন আর কেটের অনুরোধে নতুন করে দৃশ্যটি সাজানো হয়।
২. কার্ল ছিল সিনেমাটিতে রোজের বাগদত্তা। কিন্তু রোজ মনেপ্রাণে ভালোবাসত জ্যাককে আর ঘৃণা করত কার্লকে। আর তাই কার্লের প্রতি রোজের মনোভাব আরো ভালো করে বোঝানোর জন্যে ছবিটিতে একটি দৃশ্য রাখার অনুরোধ করেন কেট। আর সেটা ছিল কার্লের মুখে থুতু ছিটানো। আর এই দৃশ্যটি ঠিকঠাকভাবে নিতে ২৭ বার রোজের ভূমিকায় অভিনয় করা কেট থুতু ছিটিয়েছেন কার্লের মুখে।
৩. প্রথম দিকে রোজের ভূমিকায় কেটকে নিতে একদমই রাজী ছিলেন না জেমস ক্যামেরুন।
৪. সিনেমায় শেষদিকে দেখা যায় রোজ আর জ্যাক আবার মিলিত হয়েছে। আর একটা সময় দেখা যায় ঘড়িতে। এমনিতে খুব সামান্য ব্যাপার হলেও ঘড়ির সময়টা খুব একটা সামান্য নয়। কারণ সময়টি ছিল ঠিক রাত ২টা ২০ মিনিট। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময়।
৫. সিনেমাটিতে জ্যাককে দেখা যায় একজন চিত্রকর হিসেবে। অন্যান্য ছবির পাশাপাশি সে আঁকে রোজের সেই বিখ্যাত ছবিটিও। তবে পেন্সিলে আঁকা সেই ছবিগুলো ঠিক কে এঁকেছিল আন্দাজ করতে পারেন? জেমস ক্যামেরুন। হ্যাঁ! আর কেবল তাই নয়, কেটের পেন্সিল স্কেচটিও এই চিত্রকরেরই করা।
৬. সিনেমার মতোন সত্যিকারের টাইটানি জাহাজটিতেও জে. ডসন নামের এক ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়। যা কিনা ছবিটিতে প্রদর্শন করেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। তবে পুরো নামটা মিলে গেলেও সামান্য একটু তফাত রয়েই গিয়েছে। ছবিতে জে এর মানে ছিল জেমস, জ্যাক নয়।
৭. গোধুলীবেলার আলোর ভেতরে জ্যাক আর রোজের খাওয়া সেই বিখ্যাত চুমু আদতে গোধুলীতে ছিল না। এর পুরোটাই ছিল কম্পিউটারের কারসাজি।
৮. গ্লোরিয়া স্টুয়ার্ট, বয়স্ক রোজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যিনি, মূলত ১৯৩৯ সালেই আভিনয় থেকে অবসর নেন এবং চিত্রকর হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে অনেক অনুরোধের পর তিনি শেষ অব্দি এত বছর পর এসে টাইটানিক ছবিটিতে চুক্তিবদ্ধ হন।
৯. ছবিটিতে পানিতে পড়া মানুষদের কাঁপতে থাকা দৃশ্যগুলো আসলে নেওয়া হয়েছিল মেক্সিকোর ৮০ ডিগ্রী উত্তাপের ভেতরে।
১০. রোজ আর জ্যাকের পেন্সিল স্কেচের নগ্ন হওয়ার দৃশ্যটি দিয়েই প্রথম কাজ শুরু করে কেট আর লিওনার্দো!