প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকারের মেয়াদে যুগ পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার দুপুরে দলটির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বিভ্রান্তিকর ও দুরভিসন্ধিমূলক ভাষণ অন্তঃসারশূন্য কথামালার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রধানমন্ত্রী দেশের তথাকথিত উন্নয়ন, মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্বাস্থ্যখাতের ইতিবাচক পরিবর্তন, আইনের শাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানসহ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা ‘মিথ্যাচারের কালো দলিল’। দেশবাসী তার এই ভাষণ ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, টাকা পাচার, দুর্নীতি-লুণ্ঠন ও দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসনের একযুগ পার করলো বাংলাদেশ। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ক্ষমতাসীন দুষ্টচক্র মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবাধিকার-ন্যায়বিচারকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে জনগণকে বোকা বানাতে তথাকথিত উন্নয়নের শ্লোগান তুলেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখনো যারা গণতন্ত্র হরণ করে, মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কথিত উন্নয়নের একযুগ পূর্তি করতে চান, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মতো তাদেরও পতন হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
রিজভী আরো বলেন, করোনা টিকা নিয়েও আওয়ামী সরকারের মাষ্টারপ্ল্যান জনগণের কাছে পানির মতো পরিস্কার। গতকালও প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলেছেন-করোনা টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
ভারতই নাকি টিকা রপ্তানী করবে। কিন্তু গতকালই ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন-বাংলাদেশে কবে টিকা আসবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তাহলে কি দাঁড়ালো ? টিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের স্বনির্মিত মিথ্যাচারই প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন চলছে বাংলাদেশের মহান বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তীর ক্ষণ গণনা। লাখো প্রাণের বিনিময়ে, অসংখ্য অগণিত মা-বোনের সম্মান-সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দেশপ্রেমিক জনগণ আজ যেন নিজ দেশে পরাধীন। ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত নন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান মিথ্যাচার ও প্রতিহিংসার শিকার।
তিনি আরো বলেন, গত একযুগ ধরে দেশে চলছে আওয়ামী জাহেলিয়াতের শাসন-শোষণ-নিপীড়ণ-নির্যাতন-গুম-খুন-লুন্ঠন। শুধু একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতার খায়েশ মেটাতে দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশটাকে পরিণত করা হয়েছে দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে। গত এক দশকে দেশ থেকে নয় লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেয়া হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে লোপাট করা হয়েছে আটশ দশ কোটি টাকা। হলমার্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে জনগণের ৩ হাজার ৬ শত কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজরা কানাডায় গড়ে তুলেছে বেগমপাড়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
জনগণ যাতে ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম-অনাচার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে এজন্য একদিকে ভিন্ন দল ও মতের মানুষের পেছনে ইউনিফর্ম পরিয়ে দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে, অপরদিকে নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে মানুষকে অযথা বিতর্কে ব্যস্ত করে রাখা হয়েছে। ক্ষমতার উন্মাদনার মধ্যেই থাকতে চায় এই সরকার। প্রধানমন্ত্রী যে ভাষণই দেন না কেন, স্বৈরাচার হিসেবেই তাঁর কেবলমাত্র বিশ্বজুড়ে নামডাক হয়েছে।