ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগ পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এই মেয়াদের দুই বছর পূর্তিও আজ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে সরকারের বর্ষপূর্তিতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। তবে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি পালন করা হবে। টানা এক যুগ ক্ষমতায় থাকায় দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচার, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন, মেট্রোরেলসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। যদিও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি বিগত দু’টি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ এক যুগ ক্ষমতায় থাকায় সরকারের সাফল্য অনেক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতিও রয়েছে। সুশাসন নিশ্চিত করা, দল ও সরকারকে আলাদা রাখার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে আওয়ামী লীগের সামনে। এ ছাড়া নির্বাচন, নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে তা দূর করাও ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ।
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৬ সালের ২৩শে জুন শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে বছরের ১২ই জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর ১২ই জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে যাত্রা শুরু করে। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবারের মতো সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগপূর্তিতে বাংলাদেশের জনগণকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ‘দিন বদলের সনদ রূপকল্প-২০২১’ উপস্থাপন করেন। জনগণ নিরঙ্কুশভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে। একইভাবে দেশের জনগণ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় গণরায় দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চলমান অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখে। পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের আস্থা, সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা একযুগ দায়িত্ব পালন করছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে। দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনকে করেছে শক্তিশালী। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বের বুকে আজ বিশেষভাবে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ্বনন্দিত। দেশের আপামর জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও শতভাগ সমর্থন আর আস্থার কারণেই বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে এই সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার এই ঐতিহাসিক অভিযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগপূর্তিতে দেশের জনগণকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।