সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ “মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, গৃহহীন থাকবে না একটি পরিবার” এই স্লোগানকে ধারণ করে এবং তা বাস্তবায়নে টাঙ্গাইলে হতদরিদ্র, অসহায়, গরীব, গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত হচ্ছে ঘর। এরই ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইল জেলায় সরকারিভাবে মোট ১ হাজার ১৭৪ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের নিজস্ব অর্থায়নে আরও ১০০ টি ঘরও নির্মাণ করে দেওয়া হবে। বর্তমানে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৮০০ টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া ৫৬৪ টি ঘর আগামী ১৫ ই জানুয়ারি উপকারভোগীদের মধ্যেই হস্তান্তর করার যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এজন্য সকল প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সকল ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
রবিবার দিনব্যাপী টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, ঘাটাইল, কালিহাতী উপজেলায় হত-দরিদ্র মানুষদের জন্য ঘর তৈরি কার্যক্রম ও অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গণি।
উপকারভোগী মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ গ্রামের স্বর বানু জানান, “গত ৩০ বছর ধরে স্বামীর সংসার ছাড়া এবং নিজের নামে যতটুকু সম্পত্তি ছিলো তা পুরোটাই জালিয়াতির মাধ্যমে আমার ভাইয়েরা হাতিয়ে নিয়েছেন। আমার থাকার জায়গা বলতে কিছুই ছিলো না। বাধ্যহয়ে অন্যের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতাম এবং সর্বশেষ বিগত ছয় মাস আগে মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ গ্রামে আসি এবং সেখানে এক স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে কিছু শতাংশ জমি পাই। এরপরে সেই জমিতে আমার জন্য একটি ঘর নির্মিত হচ্ছে। ঘর পেয়ে আমি খুবই খুশি।”
এছাড়াও ভূঞাপুর উপজেলার ফলাদা ইউনিয়নের গারাবাড়ি গ্রামের জহির উদ্দিন বলেন, “আমরা যমুনার ভাঙনের লোক এবং ২০১৮ সালে যমুনা ভাঙনে ভিটামাটিসহ আমার সব জমি নদীর গর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে আমাদের থাকার ঘরবাড়ি নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার আমাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ায় আমরা খুবই খুশি। একইসাথে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘজীবি কামনা করছি।”
গারাবাড়ি গ্রামের ৮৩ বছরের এক বৃদ্ধ রইজ উদ্দিন মিয়া বলেন, “নদীগর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলাম এবং বিগত তিন বছর ধরে এখানে আমরা আশ্রয় নিয়েছি। বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন।”
আর এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, “মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যে গৃহহীনদের ও ভূমিহীনদেরকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া কর্মসুচি হাতে নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইল জেলায় সরকারিভাবে ১ হাজার ১৭৪ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির নিজস্ব অর্থায়নে আরও ১০০টি করে দেয়া হবে এবং ঘরগুলো যাতে টেকসই এবং মানসম্মত হয় সেজন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি নিয়মিত তদারকি করছেন। আর এসব ঘরগুলো মান অনেক ভালো এবং গৃহহীন ব্যক্তিরাই এসব ঘর পাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “গৃহ নির্মাণের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি। এমনকি এতে কোনো টাকা ছাড়াই তাদেরকে এ ঘর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আইনের আওতায় আনা হবে এবং কোন তদবির ছাড়াই গৃহহীন মানুষ পর্যায়ক্রমে ঘর পাবেন।”