বগুড়া: গৃহহীনদের জন্য নির্মাণাধীন ঘরের দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহের সময় বগুড়ার দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। পরে পুলিশ খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আহত দুই সাংবাদিক হলেন- সময় টেলিভিশনের বগুড়ার স্টাফ রিপোর্টার মাজেদ রহমান এবং ক্যামেরাম্যান রবিউল ইসলাম রবি। বগুড়া সদরের সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ অভিযোগ করে বলেছেন, সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি করছেন। তার গু-াবাহিনীই সাংবাদিকদের পিটিয়েছে বলে দাবি করেন।
জানা যায়, গৃহহীনদের জন্য নির্মাণাধীন ঘরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা দুর্নীতি হচ্ছে বগুড়ায়। এসব দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরার জন্য সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মাজেদ রহমান এবং ক্যামেরাম্যান রবিউল ইসলাম রবি বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের দশটিকা প্রকল্প সরেজমিনে দেখতে যান। এসময় তারা সংবাদ প্রচারের জন্য কাজের ভিডিও ফুটেজ ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন।
হঠাৎ সেখানে স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা জনিসহ ৪/৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের ওপর হামলা করে। এসময় তারা কাঠের বাটাম দিয়ে দুই সাংবাদিককে বেধড়ক পিটাতে থাকে। এক সময় দুই সাংবাদিক মাটিতে পড়ে যান। তখন সন্ত্রাসী বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাদের মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে ওই হাসপাতলেই তাদের চিকিৎসা চলছে।
সাংবাদিক মাজেদ রহমান জানান, আমরা দশটিকা এলাকার গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের দৃশ্য ধারণ করছিলাম। কাজের মান নিয়ে মিস্ত্রি এবং লেবারদের সাথে কথা বলছিলাম। এসময় নিশিন্দারা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি জনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক পিটাতে থাকে। এসময় তারা মাটিতে পড়ে যান। সাংবাদিক মাজেদ আরো জানান, এসময় ওই সন্ত্রাসীরা তাদের ক্যামেরা, মোবাইল ফোন এবং মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, সরকারি প্রকল্পের দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দুপুরে ওই দুই সাংবাদিক দশটিকা এলাকায় যায়। পেশাগত দায়িত্বপালনের সময় স্থানীয় জনিসহ আরো বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের সাথে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। এক সময় ওই সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের পিটিয়ে আহত করে। পুলিশ এই খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ ভ্যানেই হাসপাতালে নেয় এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করান। ওসি আরো বলেন, ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে বগুড়া সদর আসনের সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, বগুড়া সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান সরকারি প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক লুটপাট করেই যাচ্ছেন। এর আগে দুর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণেও তিনি গবীরদের হক নষ্ট করেছেন। এবারো তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত গৃহহীনদের জন্য ঘরগুলো ইচ্ছেমত নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করছেন। এমন সংবাদ যাতে মিডিয়ায় না আসে সেজন্য তিনি ওই প্রকল্প এলাকাগুলোতে তার পালিত গু-াবাহিনী দিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। ইউএনওর সেই গু-ারাই দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেছেন। তিনি ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। সেই সাথে এই ঘৃণিত ঘটনার তিব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
এবিষয়ে বগুড়া সদরের নির্বাহী কর্তকর্তা আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে এক মেম্বারের কাছে শুনেছেন যে সাংবাদিকরা ওই ঘরের পিলারগুলো ভাংছিলেন এসময় তাদের উপর হামলা হয়েছে। কারা হামলা করেছে তাদের ওই মেম্বার চেনে না বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সারাদেশে ভূমিহীদের জন্য বগুড়া জেলায় ১৪৫২টি ঘর তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিনিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সরকারি খাস জমিতে এসব ঘরগুলো নির্মাণ হচ্ছে। ভূমি এবং গৃহহীনদের মধ্যে এসব ঘর বিতরণ করা হবে। এই ঘরগুলো নির্মাণের সময় থেকেই নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।