নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে সেগুলোকে ভিত্তিহীন, অসত্য ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
আজ বিকালে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে- তাই বিষয়টি স্পষ্ট করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ইসিকে দায়ী করে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা অনভিপ্রেত ও আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো প্রশ্ন নেননি সিইসি নূরুল হুদা। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীও ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে এর তদন্ত করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন ৪২ জন নাগরিক। গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে এই চিঠি পাঠানো হয় বলে জানানো হয়েছে।
সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রশাসনিক ব্যয় খাতের জন্য কমিশন চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আইন অনুযায়ী সব ব্যয় অডিটযোগ্য।
অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না হলে ব্যয়কৃত অর্থ কোষাগারে ফেরত যাবে। সব প্রক্রিয়া দালিলিক প্রমাণভিত্তিক। এ ক্ষেত্রে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন,একাদশ সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ১৫ জন বিশেষ বক্তার জন্য কর্ম পরিকল্পনায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দই ছিল না। সেখানে নির্বাচন কমিশনারদের বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে দুই কোটি টাকার মতো আর্থিক অসাধারণ অনিয়ম মর্মে অভিযোগ অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৭ (৩) অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু প্রশিক্ষণ প্রদানের সম্মানের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। ফলে সংবিধান লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠতে পারে না এবং সংবিধানের অপব্যাখ্যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়।
কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ খ-ন করে সিইসি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত। নিয়োগের যাবতীয় প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় কোনও মহল থেকে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কোনও প্রমাণ ছাড়াই চার কোটি চার লাখ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে মর্মে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।
নিয়মবহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তাদের প্রাধিকারভুক্ত একটি জিপ ও একটি কার এবং তার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করে। নতুন গাড়ি বিলাসবহুল তো নয়ই, অতি সাধারণ মানের। নির্বাচন কমিশন গাড়ি বিলাস করেনি, বরং তিন বছর ছয় মাস প্রাধিকারভুক্ত গাড়ি পায়নি। তারা প্রকল্প থেকে সচিবালয়ের জন্য দেয়া গাড়ি শেয়ার করে ব্যবহার করেছেন মাত্র। কাজেই নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগের জবাবে সিইসি কে এম হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএম আমদানি করেনি। পিপিআর অনুসরণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তা ক্রয় করা হয়েছে। ইভিএম কেনার কোনো বিল কমিশনের কাছে ন্যস্ত হয় না। এ বিল সরকারিভাবে সরাসরি সেনাকর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়। এ কাজে নির্বাচন কমিশন কোনও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে না। এখানে দুর্নীতির কোনো প্রশ্ন ওঠে না।
জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ অনিয়মের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো অভিযোগ তোলেননি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ দল সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রচারেও কোনও গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের কোনও বিষয়ে প্রচার করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন ভোটে অনিয়ম সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে যে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছেম তা অনভিপ্রেত এবং আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
সিইসি দাবি করেন, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সংসদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি পদে ২-৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট পড়ে ৬০-৮০ পার্সেন্ট। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা চলে গেছে এমন মন্তব্য ভিত্তিহীন।