সিলেট: জালালাবাদ গ্যাসে শাহ আলম ভূঁইয়া বিএনপি নেতা হিসেবেই পরিচিত। সিলেট জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদবিধারী নেতাও ছিলেন। এখন তিনি জালালাবাদ গ্যাস কর্মচারী লীগের সভাপতি। নিজেকে প্রকাশ করেন মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও। শ্রমিক লীগ নেতারা দাবি করেছেন- ফায়দা লুটতে কর্মচারী লীগের ব্যানার দখল করে আছে শাহ আলম ভূঁইয়াসহ কয়েকজন সুবিধাভোগী নেতা। সিলেটের জালালাবাদ গ্যাসের ঊর্ধ্বতন টেকনিশিয়ান কাম সুপারভাইজার পদে কর্মরত শাহ আলম ভূঁইয়া। তিনি এক সময় ছিলেন বিএনপিপন্থি সিবিএ সংগঠন জালালাবাদ গ্যাস কর্মচারী ইউনিয়নের (৭৮০) নেতা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ওই সংগঠনের কয়েকজন নেতা দুর্নীতির ঘটনায় বিতর্কিত হন।
কেউ কেউ কারাবরণও করেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সংগঠনের শক্তি কমে যায়। একই সময় আওয়ামী লীগপন্থি সিবিএ নেতাদের সংগঠন ছিল জালালাবাদ গ্যাস কর্মচারী লীগ (১৬৯০)। বিএনপিপন্থি কয়েকজন সিনিয়র নেতা কর্মচারী লীগের ব্যানারে চলে আসেন। এ নিয়ে বিরোধ বাধলে কর্মচারী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রহমান সহ বেশির ভাগ নেতা নতুন সংগঠন গঠন করেন। জালালাবাদ গ্যাস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (২৫২০) নামের ওই সংগঠনের ব্যানারে তারা সিবিএ নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। বর্তমানে জালালাবাদ গ্যাসের সিবিএ’র নেতৃত্বে রয়েছেন আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে শ্রমিক লীগের নেতারা। কিন্তু পূর্বের কর্মচারী লীগ নামের সংগঠনের বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের এক সময়ে নেতা শাহ আলম ভূঁইয়া। তার নেতৃত্বে নতুন কমিটি লেবার অফিস থেকে অনুমোদিত হওয়ার পর এতে আপত্তি জানিয়েছেন শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রহমান। তিনি জানান- কর্মচারী লীগ নামের কোনো সংগঠনে শ্রমিক দলের কেউ সভাপতি হতে পারেন না। জালালাবাদ গ্যাস কর্মচারী লীগ এখনো জাতীয় শ্রমিক লীগের অধিভুক্ত একটি সংগঠন। এ কারণে তিনি বিষয়টি অবগত করে সিলেটের লেবার অফিসে চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেছেন- কর্মচারী লীগের কমিটি অবৈধভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছেন।
শাহ আলম ভূঁইয়া সহ কয়েকজন ওই কমিটির সদস্য নয় বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থায় যাচ্ছেন বলে জানান আব্দুর রহমান। এদিকে- ২০০৫ সালের আগস্টে অনুমোদিত জাতীয় শ্রমিক দলের সিলেট মহানগর কমিটিতে দেখা গেছে জালালাবাদ গ্যাসের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা শাহ্ আলম ভূঁইয়া ৩ নং সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন জালালাবাদ গ্যাসের আরেক শ্রমিকদল নেতা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সোলেমান আলী। পরবর্তী ২০১৪ দলের ১০ই নভেম্বর সিলেট জেলা শ্রমিক দলের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেখানে জালালাবাদ গ্যাসের শাহ্ আলম ভূঁইয়া ছিলেন ৮ম সহ-সভাপতি। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মাসকু উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সুরমান আলী। শ্রমিক দলের কমিটিতে থাকা শাহ আলম ভূঁইয়া কীভাবে শ্রমিক লীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জালালাবাদ গ্যাসের কর্মচারীরা।
খোদ বিএনপিপন্থি শ্রমিকদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গত কয়েক মাস ধরে জালালাবাদ গ্যাসে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে। তবে- জালালাবাদ গ্যাস কর্মচারী লীগের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে থাকা শাহ আলম ভূঁইয়া নিজেকে শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। মানবজমিনকে তিনি জানিয়েছেন- তিনি শুধু জালালাবাদ গ্যাসের কর্মচারী লীগের সভাপতি নন, তিনি মহানগর শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদকও। শাহ আলম ভূঁইয়ার এই বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছেন- সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহরিয়ার কবির সেলিম। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- শাহ আলম ভূঁইয়া শ্রমিকদল নেতা। সে কীভাবে শ্রমিক লীগ নেতা হবে। মহানগর শ্রমিক লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে ভুলবশত: তার নাম চলে গিয়েছিল। পরে সে বিএনপি ও শ্রমিকদল নেতা হিসেবে জানার পর নাম বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান কমিটির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন সেলিম।