আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এক আইনজীবীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও বেআইনিভাবে আটকে রাখার অভিযোগে তার অপসারণের দাবিতে আইনজীবীরা গতকাল কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। সিএমএম আদালতের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিচার কাজ। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আইনজীবীরা এই বিক্ষোভ করেন। তবে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর বিক্ষোভ স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিএমএম জুলফিকার হায়দারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তাকে (আসাদুজ্জামান নূর) আপাতত দু’দিনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
তাকে প্রত্যাহার বা বদলি করা হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। অপরদিকে, ঢাকার সিএমএম আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার এসিএমএম আসাদুজ্জামান নূর দু’দিনের ছুটি নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিচারক কর্তৃক আইনজীবীকে আটকে রাখার ঘটনায় মঙ্গলবার থেকেই সাধারণ আইনজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। গতকাল সকালে সহকর্মীর হেনস্তার প্রতিবাদে সিএমএম আদালতে সামনে জড়ো হতে থাকেন। এরপর সকাল ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা মিছিল করে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরসহ কয়েকজন বিচারকের এজলাসে ঢুকে পড়েন এবং বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ সময় হৈ চৈয়ের মধ্যে আদালতপাড়ার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিচার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আইনজীবীরা ওই বিচারকের এজলাসে তালা লাগিয়ে দেন এবং সিএমএম আদালত ভবনের কলাপসিবল গেটেও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। আইনজীবী শ্রেষ্ঠ আহমেদ রতন বলেন, আইনজীবী রুবেল আহমেদ ভূঁইয়া গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় একটি মামলার শুনানি করতে বিচারক আসাদুজ্জামান নূরের এজলাসে যান। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ওই আদালতের পেশকার জানান, দুপুর ১২টায় বিচারক এজলাসে উঠবেন। তখন আইনজীবী বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময় বলা হোক, তা না হলে আমাদের সমস্যা হয়। সকালে অন্য আদালতেও মামলা থাকে। এক মামলার শুনানি করতে গেলে অন্যটি করা যায় না। পরে বিচারক এজলাসে উঠে ওই আইনজীবীকে অন্য মামলা সেরে আসতে বলেন। অন্য মামলা সেরে আসার পর আইনজীবী রুবেল তার কনিষ্ঠ সহযোগী আইনজীবীকে পাঠান এ মামলা শুনানি করতে। তখন বিচারক বলেন, সেই আইনজীবীকে আসতে বলেন। আইনজীবী রুবেল এজলাসে এলে কোনো কথা না শুনেই বিচারক এজলাসে থাকা পুলিশকে নির্দেশ দেন ওই আইনজীবীকে আটক করার জন্য। পরে অন্য আইনজীবীরা বিচারককে অনুরোধ করে তাকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
ঢাকা বারের কার্যকরী পরিষদের অফিস সেক্রেটারি এইচ এম মাসুম বলেন, আমাদের ঢাকা বারের সদস্য এডভোকেট রুবেল আহমেদ ভূঁইয়া নামের এক আইনজীবীকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন হাকিম আসাদুজ্জামান নূর। এর প্রতিবাদে আইনজীবীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ঢাকা বারের কার্যকরী পরিষদের কয়েকজন বিষয়টি সুরাহা করতে মুখ্য মহানগর হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদেরকে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দেন এবং বিষয়টি আন্দোলনকারী আইনজীবীদের জানাই। পরে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।