নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে পুরো বিশ্ব। বৃটেনে ভাইরাসটির নতুন রূপ শনাক্তের পর দেশটি কার্যত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। বৃটেনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে অনেক দেশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শুধু বৃটেন নয়, আরো অনেক দেশে নতুন ধরনের ভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটে থাকতে পারে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলেন, নতুন করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ থাকা ভালো। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
প্রথম করণীয় হবে বৃটেন থেকে কেউ যাতে দেশে না আসতে পারে। এমনিই আমরা করোনার আগের ভেরিয়েন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। যদি নতুন এই ভেরিয়েন দেশে আসে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তখন সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বেড়ে যাবে। দেশে নেমে আসবে বড় বিপদ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতে করোনার প্রথম ধাক্কাই সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় নতুন রূপের করোনা হাজির হলে বাড়তি ঝক্কি তৈরি হবে। সংক্রমণ বেড়ে গেলে পরিস্থিতি হয়তো সামাল দেয়া যাবে না। তাই সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
করোনার নতুন রূপের কী প্রভাব পড়বে দেশে এবং প্রস্তুতি কতটুকু জানতে চাইলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, নতুন এই ভাইরাসটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এতে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। আমরা আগের করোনাভাইরাসই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। সুতরাং নতুন করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। আগে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের অনেকেই কোয়ারেন্টিন মানেননি। দেশের বিশিষ্ট এই ভাইরোলজিস্ট মনে করেন এই পরিস্থিতিতে বৃটেন থেকে লোক আসা বন্ধ করে দিতে হবে। আর যদি কেউ এসেই পড়ে তাহলে তাকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে। না হলে নতুন করোনাভাইরাস দেশে এলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, বৃটেনে নতুন ধরনের করোনায় বিশ্বে উদ্বেগ রয়েছে। তাই বৃটেন থেকে কোনো লোককে দেশে আসতে দেয়া যাবে না। কাল বিলম্ব না করে এটা করতে হবে আমাদের। আবার বৃটেন থেকে কেউ যদি অন্য দেশ হয়েও প্রবেশ করতে চায় সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে বৃটেন থেকে অন্যদেশে ১৪ দিন কাটিয়েছে কিনা দেখতে হবে। এক্ষেত্রে বিমানবন্দরে তাকে পিসিআর টেস্ট করতে হবে। এজন্য তাকে কমপক্ষে একদিন বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলে ঢোকার অনুমতি পাবে। আর পজেটিভ হলে তাকে আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তারসহ সেখানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে গেলে মিউটেশন বা বিভাজন হয়ে নতুন স্ট্রিম তৈরি করে। এজন্য বাংলাদেশে বেশি বেশি নিয়মিত গবেষণা হওয়া দরকার।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ থাকা ভালো। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এমনিতে আমাদের দেশে সংক্রমণ বিপর্যয় অবস্থায় আছে। এখনও ৮-এর উপরে সংক্রমণ হার। দেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি সনু্তষ্ট নন উল্লেখ করে বলেন, এখন অনেকগুলো ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা করানো। তাহলে মৃত্যু ও সংক্রমণ কমবে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি ভালোভাবে মানতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরিবহন, লঞ্চ ও ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে কার্যকর কিনা তা দেখতে হবে। বদ্ধ জায়গায় মনিটর করতে হবে। বিদেশ থেকে লোক এলে কোয়ারেন্টিনে আছেন কিনা দেখতে হবে। হোম কোয়ারেন্টিন সঠিকভাবে মানছে কিনা মনিটর করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, বৃটেনে নতুন
করোনাভাইরাসটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এর কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এরমধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ হলো- পরিবর্তন। নতুন এই ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ানোর কারণে অনেক দেশ ইতিমধ্যেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতও। দ্রুত ছড়ানোর কারণে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরো বলেন, প্রথম করণীয় হবে বৃটেন থেকে কেউ যাতে দেশে না আসতে পারে। দু’-চারজন এলেও যাতে কোয়ারেন্টিনে যায় সেদিকে জোর দিতে হবে। ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, এমনিই আমরা করোনার আগের ভেরিয়েন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। যদি নতুন এই ভেরিয়েন দেশে ঢুকে, তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তখন সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বেড়ে যাবে। সুতরাং নতুন ধরনের করোনায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।