১৪ ডিসেম্বর বাঙালিদের মেধাশুন্য পাকিস্তানিরা করেছেন না অন্যকারো পরিকল্পনা ছিলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমরা যখন খবর পেলাম পাকিস্তানিদের পতন হবে, তখন আমরা আনন্দে উল্লাসিত, আমরা ঢাকায় ফিরবো। জেনারেল ওসমানী সাহেব বললেন আমারতো অর্ডার নেই। আমি বললাম অর্ডার! ইউ আর দ্যা কমান্ডার অফ চিফ। আপনার আবার অর্ডার কিসের? আপনিতো সবকিছু নির্ধারণ করবেন। কিন্তু তিনি বললেন, না। যুদ্ধ কিভাবে পরিচালনা হবে সেটা আমার নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কতগুলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমি গ্রহণ করি না। এটা প্রধানমন্ত্রী করেন, সুতরাং তার সাথে কথা বলতে হবে। আমাকে কামাল বললেন জাফর ভাই চলেন আমরা ঢাকায় যাই। কিন্তু তিনি বললেন আমার সিদ্ধান্ত হলো আমরা সবাই একত্রিত হয়ে ঢাকায় যাবো। উনার মনটা খুব খারাপ। তারপরের ঘটনা আপনারা সবাই জানেন।’
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘১৬ তারিখ সিলেট আমাদের ব্রিগেডিয়ার গুট্ট বললেন, সিলেট ইজ ক্লিয়ার। পাকিস্তানের কোন প্লেন নেই কিছু নেই। তখন জেনারেল ওসমানী বললেন আমি আমার পূর্বপূরুষের ভিটায় যাবো। আমরা রওয়ানা হলাম। আমরা যখন যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটি প্লেন এসে আমাদের প্লেনকে আক্রমণ করে এবং প্লেনটির ফুয়েল ট্যাংক পড়ে যায়।
ইন্ডিয়ান পাইলট বললেন, ‘আই হ্যাভ টু টেন মিনিউটস ফর লিভ। ওসমানী সাহেব লাফ দিয়ে উঠে ফুয়েল ট্যাংক দেখেন আর জেনারেল রব আহত হন, আমি তাকে কার্ডিয়াক ম্যাসেজ দিচ্ছিলাম। আমারো সামান্য ব্রাশ লেগে ছিলো, আর কামাল আহত হয়েছে। তখন ওসমানী সাহেব বলছিলো, ‘ডোন্ট ওয়ারী মাই বয়, আই নো সিলেট বাম্প অফ মাই হ্যান্ড।’
আমি সিলেটকে আমার হাতের তালুর মতন চিনি। এরপর ওসমানী সাহেব বললেন জাফর সাহেব গিভ মি ইউর জ্যাকেট। আমি আমার দামী জ্যাকেটটি দিলাম। তিনি সেটা দিয়ে তেলের ট্যাংকিটা চেপে ধরলেন। একসময় তিনি বললেন ল্যান্ড হেয়ার। ইতিহাসের কোথাও এত বড় ঘটনা নেই। প্লেনটিকে আমরা আসামের দিকে চলে যেতে দেখেছি। আমি জানি না প্লেনটি কার! ভারতীয় বাহিনীতেও এরকম প্লেন নেই, আর আমাদেরও নেই। তবে ১৪ তারিখ ঢাকাতে এই ঘটনা ঘটেছে। এই যে নেতাশুন্য করার পরিকল্না এটা পাকিস্তানিরা করেছে না অন্যকেউ করেছে, যদি ঘটনাটা মিলান তবে বুঝতে পারবেন। কারণ তারা কি করে জানতো? অন্তত পক্ষে ভারত জানত এরকম একটা ম্যাসাকার হবে। তারা এটার সাথে যুক্ত আছেন কিনা আমি জানি না। তবে এই ইতিহাসগুলো গবেষণার বিষয়।’
প্রবীণ এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, `অক্টোবর মাসে যে চুক্তি হয়েছিলো তাও আমি বলতে পারি। কারণ আমি জড়িত না থাকলেও সরাসরি ইতিহাসের এই বিষয়গুলো দেখেছি। তিনি বলেন, খালেদ মোশাররফ আহত হয়েছিলো তখন আমি তার চিকিৎসা করতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, ওরা আমাদেরকে সিকিম বানাতে চায়। আপনি আমাকে বিলেতে নিয়ে চলুন। তখন আমি বলেছিলাম, আমি আপনাকে টিকিট দিতে পারি কিন্ত আপনাকে এরা বের হতে দিবে? এসব তথ্যগুলো কোথায়? তাই আমি মনে করে এসব বিষয় গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।’
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল ইব্রাহীম, প্রবীণ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।