ডেস্ক : বাংলাদেশের নির্বাসিত বহুল আলোচিত নারীবাদী সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন আজ তার ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেখানে তিনি বলেন বাংলা অনেক শব্দ আছে যেগুলো নিয়ে কোন আপত্তি নেই তার। আসলে কোনও শব্দই অশ্লীল নয়।
ফেসবুক থেকে বাংলাদেশের অনেক খবর জোটে। মূলত বাংলাদেশের খবর আমি ফেসবুকের মাধ্যমেই পাই। আমার ফেসবুকটা কেবল বাংলায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাই বলে বাংলাদেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদেরই বন্ধু করেছি। আজই দেখলাম, সাইয়েদ জামিল নামের এক কবি জীবনানন্দ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর কবিতা আগে পড়িনি। আজ তাঁর কবিতার কিছু নমুনা দেখলাম ফেসবুকে। অনেকে গালি দিচ্ছে কবিকে। কারণ কবিতায় মাগী, চোদা এই শব্দগুলো আছে। আমি বুঝিনা এতে অসন্তুষ্ট হওয়ার কী আছে। বাংলাদেশের পুরুষদের তো এই-ই দৈনন্দিন ভাষা। আমার ফেসবুকের মন্তব্য পাতা যতদিন উন্মুক্ত ছিল সবার জন্য, ওই ভাষাতেই অধিকাংশ পুরুষ মন্তব্য করতো। এখনও দিনে একশ ইনবক্স মেসেজ পাই। ওই ভাষাতেই অধিকাংশ লোক লেখে। বাংলাদেশে আমি কুড়ি বছর অনুপস্থিত।
সুতরাং দেশে থেকে দেশের ভাষা শোনা হয়নি এতকাল। তবে ফেসবুকে লেখালেখি করার পর থেকে দেশের ভাষাটা বেশ কানে আসে। এগুলো এখন আর অশ্লীল শব্দ নয় বাংলাদেশের জন্য। এ শব্দগুলোই, এই গালিগুলোই রিয়ালিটি। কবিতা তো জীবনের কথা বলে। তাই জামিলের কবিতায় খুব স্বাভাবিক ভাবে উঠে এসেছে জীবন আর জীবনে জড়িয়ে থাকা পুরুষিক ভাষা। শব্দ নিয়ে আপত্তি নেই আমার। কোনও শব্দই অশ্লীল নয়। অশ্লীলতা যদি কোথাও থাকে, সে মানুষের মনে, কোনও শব্দে বা ভাষায় নয়, কোনও শরীরে বা পোশাকে নয়।
তবে জামিলের কবিতায় যেটা খুব প্রকটভাবে আছে, সেটা নিয়ে আমি আপত্তি করি। সেটা নারী বিদ্বেষ। কুৎসিত অশ্লীল নোংরা নারীবিদ্বেষ। আজও পুরুষেরা এই নারীবিদ্বেষকে নির্লজ্জভাবে ধারণ করছে। কবি বনছে, শিল্পী বনছে, বড় বড় মহামানব পর্যন্ত বনে যাচ্ছে, কিন্তু নারীকে ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছে না, নারীবিদ্বেষ থেকে নিজেদের মুক্তও করতে পারছে না। চেষ্টা করছে কি মুক্ত করতে? আমি শিউর, এই চেষ্টাটাই কেউ করছে না। চেষ্টা করলে পারবে না, এ কোনও কথা নয়।
চেষ্টা করে মঙ্গলগ্রহে পর্যন্ত চলে যাওয়া যায়, আর নারীকে নারী বলে ঘৃণা করা বন্ধ করা যায় না? এইসব নারীবিদ্বেষী কবিদের কবিতা হয়তো পড়তে ভালো লাগে, এঁরা হয়তো বড় বড় পুরস্কারও পান, এঁদের হয়তো ভক্তসংখ্যাও অনেক, কিন্তু মানুষ হিসেবে এই কবিগুলো খুব নিকৃষ্ট, খুব অশ্লীল, খুব নোংরা। নিকৃষ্ট নোংরা মনের মানুষের কবিতা পড়তে আমার আবার রুচি হয় না।