জাবি প্রতিনিধি: শিক্ষার্র্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবির মুখে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একাডেমিক মিটিং সূত্রমতে, পরীক্ষা প্রস্তাবনা কমিটি ও ডিন কমিটি শুধুমাত্র চতুর্থ বর্ষ বা শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়ার জন্য নতুন একটি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাব মতে আগের নিয়মে ১০০ নাম্বারের মধ্য থেকে ক্লাস উপস্থিতি ও টিউটোরিয়াল মার্ক থেকে ৩০ নম্বর মূল্যায়ন করা হবে, চূড়ান্ত পরীক্ষার অংশ হিসাবে ২০ নাম্বারের অনলাইন ভাইভা নেয়া হবে। বাকি ৫০ নাম্বার পূর্ববর্তী বর্ষের বা সেমিস্টার থেকে গড় মার্কিং করে স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তবে যাদের শেষ বর্ষের বা শেষ সেমিস্টারে কয়েকটি পরীক্ষা বাকি আছে তাদের ক্ষেত্রে হয়ে যাওয়া পরীক্ষার গড়ও মার্কিং করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
সর্বশেষ তারা ৬ই ডিসেম্বর থেকে লাগাতার প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা দেয়। এছাড়া ৪৩তম বিসিএসের সার্কুলেশনকে সামনে রেখে আগামী ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবি জানায়। এতদিন সেশনজট, চাকরি বাজারে পিছিয়ে যাওয়ার ইস্যুতে আন্দোলন চললেও বিসিএসের সার্কুলেশনের পর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জোরদার হয়। পরে আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০০ নাম্বারের মধ্যে ৫০ নাম্বার গড় মার্কিং করে মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা চাই যেকোনভাবে আমাদের পরীক্ষা নিয়ে নেয়া হউক। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদেরকে পরিবারের হাল ধরতে হচ্ছে। শুধু বিসিএস না অন্যান্য চাকরির সার্কুলেশন চলছে। এসব চাকরি বাজারেও আমাদের ব্যাচমেটরা ঢুকতে পারছে না। এভাবে মাসের পর মাস বসে থাকার তো কোন মানে হয় না। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইমুম মৌসুমী বৃষ্টি বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের প্রস্তাবটা আমি সমর্থন করছি না। কারণ প্রত্যেক বর্ষে আলাদা কোর্স থাকে। প্রত্যেক কোর্স ও বর্ষের স্বতন্ত্র গুরত্ব থাকে। এছাড়া ৫০ নাম্বার গড় করলে যার সিজিপিএ ৪.০০ সেও পাবে ৫০ এ ৪০, তার মানে পরীক্ষার আগেই তার ১০ নাম্বার কমে যাচ্ছে। সবার চতুর্থ বর্ষে ভাল করার পরিকল্পনা থাকে। ফলে এখানে ভাল রেজাল্ট করার সুযোগটা থাকছে না। এছাড়া ভাইভা অনেকটা ‘জুয়ার’ মতো। ভাল প্রস্তুতি সত্ত্বেও অনেকের ভাল হয়না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় গুচ্ছ বা অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে না। তার মানে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে ইন ক্লাস ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাহলে কেন চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ইন ক্লাস নেওয়া যাবে না। হল না খুলে বাসা ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ দিয়ে চাইলে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ইন ক্লাস পরীক্ষা নিতে পারে। এভাবে গড় মার্কিং আমাদের সার্টিফিকেটের গুরুত্বও কমাবে। যোগাযোগ করা হলে, বিশ^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, এই মুহূর্তে ইন ক্লাস পরীক্ষা সম্ভব না। তাছাড়া এসাইনমেন্ট নিলে সেখানে এক্সারনাল খুঁজতে হবে। শিক্ষার্থীরা থিসিস ও ডিজার্টেশনই অনলাইনে জমা দিতে পারতেছে না সেখানে চূড়ান্ত পরীক্ষার এসাইনমেন্ট কীভাবে জমা দিবে। ইনকোর্সের এসাইনমেন্ট তারিখ মতো দিতে পারে না, চূড়ান্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে এরকম করলে তো সেটা কনসিডার করা যাবে না। তবে একাডেমিক কাউন্সিলে নেওয়া সিদ্ধান্তটা সিন্ডিকেটে পাস করানোর আগে আরেকটু মডিফাই করার সুযোগ আছে। আমাদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা যাতে এপিয়ার্ড দিয়ে ৪৩ তম বিসিএস দিতে পারে তার প্রচেষ্টা চলছে। আমাদের ভিসি মহোদয় ইতিমধ্যে পিএসসি চেয়ারম্যানকে ফোন করে সার্কুলেশনের তারিখ পেছানোর অনুরোধ করেছেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল আহছান টিটু বলেন, এই সিদ্ধান্তটা আমার কাছে বেশ তাড়াহুড়া করে নিয়েছে মনে হলো। অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয় যেখানে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি সেখানে আমাদের বিশ^বিদ্যালয় আগ বাড়িয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। এখন শিক্ষার্থীদের বলবে অটোপাস। আমাদের প্রস্তাব ছিল পরীক্ষা শাখায় এসাইনমেন্ট জমা নিয়ে ইন্টারনাল ও এক্সাটারনাল নিয়ে মূল্যায়ন করা। ভাইভা অনেক বেশি সাব্জেক্টিভ। অনেক ভাল ছাত্র ভাইভাতে ভাল করতে পারে না। এখন এভাবে গড় করে মূল্যায়নের ফলে শিক্ষার্থীদের গ্রেডশীট কেমন হবে! বাইরে পড়তে গেলে তাদের গ্রেডশীট দেখতে চাইবে। বিসিএসের জন্য তাড়াহুড়া করে এমন সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিসিএস সার্কুলেশন পিছানো যায়। অথবা শিক্ষার্থীদের এপিয়ার্ট সার্টিফিকেট দেয়া যায়।