ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে যেন পরিস্থিতি ঘোলাটে না হয় সেজন্য সতর্ক রয়েছে দলটি। এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে কেউ কোথাও যেন পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রয়োজনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। তৃণমূলকে জানানো হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত ইস্যুটিকে পুঁজি করে যেকোনো সময় অঘটন ঘটাতে পারে। তাই প্রয়োজনে রাজপথ দখলে রাখতে হবে। এদিকে রাজধানী কেন্দ্রিক অরাজকতা ঠেকাতে এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, পৃথিবীর সব দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে আমাদের দেশে ভাস্কর্য থাকলে সমস্যা কোথায়? যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। এজন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভাস্কর্যবিরোধীদের প্রতিহত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শীর্ষ পর্যায় থেকে সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করে মৌলবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা মানবজমিনকে বলেন, ভাস্কর্য ইস্যুতে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না তারা। বরং মৌলবাদীদের রুখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকেও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ভাস্কর্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। এ ব্যাপারে নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে। জাতির পিতার ভাস্কর্য নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ নেই। যারা বিতর্কের চেষ্টা করবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। বাংলাদেশে তাদের কোনো জায়গা নেই। তারা বিতর্ক সৃষ্টি করে দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। সামপ্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার জন্য তারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেছে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মোকাবিলা করবো। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ধর্মীয় সহনশীলতা বিনষ্টের যেকোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। বিএনপি এখন একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তাই আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা অন্যের ওপর ভর করে ক্ষমতায় যেতে অন্ধকারের চোরাগলি খুঁজছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ফতোয়া দেয়া হলো যে, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তারা সবাই কাফের। সেই ধারাবাহিকতাতেই তাদেরই প্রেতাত্মারাই কিন্তু আজকে ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, হঠাৎ করে এই প্রশ্ন আনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ যারা এই প্রশ্নগুলো উপস্থাপন করছেন তাদের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। তারা বিভিন্ন দলের নেতা, তাদের দলগুলো আবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। সুতরাং তারা যখন বক্তব্য দেয়, তখন
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বক্তব্য দেয়। ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, এর অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা এতদিন ধরে স্বাধীনতা বিরোধীদের লালন করেছে, পোষণ করেছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের দিয়ে রাজনীতি করে, তারাই এটার পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে। সুতরাং আমাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এর আগে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আর কোনো আপস নয়। আসল ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করে এ দেশের মাটিতেই শাস্তি দিতে হবে। তাদের নির্মূল করে দিতে হবে যেন বারবার স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। কঠোর বার্তা দিয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেছেন, এবার আর কম্প্রোমাইজ (আপস) নয়। যখন ধরবো, ফাইনাল হয়ে যাবে। আমরা মাঠে আছি দেখে নেবো তাদের।