নিয়োগবিধি সংশোধনসহ বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি চলছে। এতে সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। ‘বাংলাদেশ হেলথ্ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন’ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রবিউল আলম খোকন বলেন, তাদের আন্দোলন চলছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বসে আলোচনার পর তারা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করতে পারেন। এ ছাড়া আগামী ১২ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য হাম-রুবেলা কর্মসূচিতে তারা কাজ করবেন।
নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে গত ২৬শে নভেম্বর থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছেন সারা দেশের প্রায় ২০ হাজার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। দাবি পূরণে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত তারা এ কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য সহকারীদের আরেকটি দল কর্মবিরতির প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা বললেও কার্যত মাঠে নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন দেশের কয়েক লাখ শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ হেলথ্ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন’ সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে গত ২৬শে নভেম্বর থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছেন।
হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইনসহ দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কর্মসূচিতে বিরত থাকার ঘোষণা দেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হেল্থ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রবিউল আলম খোকন বলেন, প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ৩ থেকে ৭ বছর পরপর পদোন্নতি পান। কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২০ থেকে ২৫ বছরে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে পারেন না। দীর্ঘ বছর পর পদোন্নতি পেলেও স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পান, যখন চাকরির বয়স মাত্র ৫ থেকে ৬ মাস বাকি থাকে। পদোন্নতি হলেও বেতন বাড়ে না এক পয়সাও। এই বৈষম্য বন্ধে অতীতে নীতি-নির্ধারকরা বার বার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই তারা নিয়োগবিধি সংশোধনসহ ক্রমানুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন গ্রেড ১৬তম থেকে যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩তম গ্রেডে উন্নীতকরণে কর্মবিরতিতে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীরা আরো অভিযোগ করেন, ১৯৯৮ সালের ৬ই ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সহকারীদের এক মহাসমাবেশে তাদের পদোন্নতি বৈষম্য নিরসনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ২রা জানুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দেন। এ ছাড়া চলতি বছরের ২০শে ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য সহকারীরা হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন বর্জন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম ও মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ দাবি মেনে নিয়ে ৩০শে জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে মর্মে লিখিত সমঝোতা পত্রে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা না হওয়ায় এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান স্বাস্থ্য সহকারীরা। তবে বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন নামের ব্যানারে আরেকটি দল স্বাস্থ্য সহকারীদের সবচেয়ে পুরাতন সংগঠন দাবি করে এই কর্মবিরতির প্রতিবাদ জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক মানবজমিনকে বলেন, হাম-রুবেলার ক্যাম্পেইনের প্রস্তুতি হিসেবে কিছু কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত ৫ই ডিসেম্বর থেকে ক্যাম্পেইন শুরু হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এক সপ্তাহ অর্থাৎ আগামী ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা চলবে ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যে আমরা স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো পরিচালক প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ওয়াকিবহাল। তারা চায় আদেশ। আদেশ হতে ৩/৪ মাস সময় লাগে। তিনি আরো জানান, একটি চিঠি ইস্যু হয়েছে। যারা কাজে ফিরবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হাসান ইমাম বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীরা বেতন-ভাতা নয় বরং ১৬ থেকে ১৩তম গ্রেডে আসার দাবি করেছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারি চাকরির স্কেল পরিবর্তন করতে পারে না। দাবি-দাওয়াগুলো সুপারিশ আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।