ফাঁকা নেই আইসিইউ

Slider জাতীয়

শীতের শুরুতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সেই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। করোনা রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য সাধারণ ও জটিল রোগীদের চাপে সরকারি হাসপাতালের নাজেহাল অবস্থা। ঢাকার সরকারি বড় বড় হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগে প্রতিদিনই শত শত রোগী শীতকালীন নানান সমস্যা নিয়ে ভিড় করছেন। রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। অনেক রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার অনেককে ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ভর্তি রোগীদের জন্য বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যার ব্যবস্থা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাধ্য হয়ে রোগীরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে শুয়ে-বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ ও করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীরা। বিশেষকরে করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীরা আইসিইউ শয্যা পাবার আশায় হাহাকার করছেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সীমিত সংখ্যক আইসিইউ শয্যা দিয়ে জটিল রোগীদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ চাহিদা এতোটাই বেড়েছে একটি শয্যা খালি হলে এর বিপরীতে ২০ থেকে ২৫ জন রোগীর অনুরোধ থাকছে। দিন দিন আইসিইউ শয্যার ওয়েটিং লিস্টের তালিকা লম্বা হচ্ছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালের সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা দুটোই ফাঁকা পড়ে আছে। ব্যয়বহুল ও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ নিয়ে অনাস্থা থাকায় রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালের সেবার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জটিল রোগীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ’তে শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ’তে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিনে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ’তে চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ওয়ার্ডের সাধারণ শয্যার রোগীদের মধ্যে কারো কারো অবস্থা মুহূর্তের মধ্যে সংকটাপন্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যার অনুরোধ থাকে। এর বাইরে হাসপাতালের বাইরের রোগীর জন্যও অনুরোধ আসছে। আইসিইউ প্রত্যাশী রোগীদের জন্য প্রতিদিন একটি তালিকা মেইনটেইন করা হয়। ওই তালিকাতে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন নতুন রোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এর বাইরে বেসরকারি অনেক হাসপাতালের ভর্তি রোগীরাও সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা পাবার জন্য তদবির করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই সকল রোগীদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে জটিল রোগীদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড ১৯টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা আছে ৩১৬টি। সরকারি ৮টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ১১৩টি। এরমধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৯৮ জন। খালি ছিল ১৫টি শয্যা। খালি শয্যার মধ্যে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৫টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ৬টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২টি ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ২টি শয্যা খালি আছে। এর বাইরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সাধারণ করোনা শয্যা থাকলেও এই দু’টি হাসপাতালে কোনো করোনা রোগীদের জন্য কোনো আইসিইউ শয্যা নাই। বেসরকারি ৯টি হাসপাতালে ২০৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এসব শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ১৩৯ জন। শয্যা খালি আছে ৬৪টি। খালি ৬৪টি শয্যার মধ্যে ইম্পালস হাসপাতালেই খালি আছে ৩২টি শয্যা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঢাকার সরকারি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ১৬টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ শয্যার সবক’টিই রোগীতে পূর্ণ ছিল। এর বাইরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪টি আইসিইউ শয্যার ২২টিতেই রোগী ভর্তি। অন্যদিকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি আইসিইউ শয্যার ১০টিতে রোগী ভর্তি। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টি শয্যাতে ১০ জন রোগী ভর্তি। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৬টি আইসিইউ শয্যার ৪টিতে রোগী ভর্তি।

এদিকে বেসরকারি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১২ শয্যার মধ্যে ১২টিতেই রোগী ভর্তি। দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা মিলছে না। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ শয্যার ৯টিতে রোগী ভর্তি। আসগর আলী হাসপাতালের ৩১টি শয্যাতে রোগী ভর্তি আছেন ২৭ জন, খালি আছে ৪টি শয্যা। স্কয়ার হাসপাতালের ২৫ শয্যার মধ্যে রোগী আছেন ১৯ জন। খালি আছে ৬টি শয্যা। ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬ শয্যার মধ্যে রোগী আছে ২ জন। খালি আছে ৪টি শয্যা। ইউনাইটেড হাসপাতালের ২২ শয্যাতে রোগী আছেন ১৪ জন। খালি আছে ৮টি শয্যা। এভার কেয়ার হাসপাতালের ২০টি শয্যার ১৮টিতে রোগী। খালি আছে ২টি শয্যা। ইম্পালস হাসপাতালের ৫৬ শয্যার মধ্যে রোগী আছে ২৪ জন। খালি আছে ৩২টি শয্যা। এ এম জেড হাসপাতালের ২১টি শয্যায় রোগী আছেন ১৪ জন। খালি আছে ৭টি শয্যা।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শিহাব উদ্দীন মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে ভর্তি জটিল রোগীদেরকে আগে আইসিইউ’তে শিফট করি। বাইরে থেকে কোনো রোগী আইসিইউ চাহিদা নিয়ে আসলে তাদেরকে সুবিধা দেয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, রোগীর চাপ বাড়ছে। আবার রোগীরা অবস্থা জটিল হলেই হাসপাতালে আসে। এ জন্য অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হয়। ভর্তি রোগীদের মধ্যে যাদেরকে আইসিইউতে শিফট করা সম্ভব হয় না তাদেরকে ওয়ার্ডেই অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাজমুল করিম মানবজমিনকে বলেন, আইসিইউ চাহিদা বেড়েছে। হাসপাতালের বাইরে থেকেও অনেক অনুরোধ আসে। কিন্তু আমরা তাদের চাহিদা মেটাতে পারি না। শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগী ভর্তি আছে হাসপাতালে তাদেরকেই আমরা আইসিইউ সাপোর্ট দেই। আগে আমাদের ২১টির মতো আইসিইউ শয্যা ছিল। এখন সেটি কমে ১৬টি হয়েছে।

করোনায় মৃত্যু ৬৮০৭
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ হাজার ৮০৭ জনে। নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৮৮ জন। মোট শনাক্ত ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪৫৭ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে আরো জানানো হয়, ১১৮টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ১৯৯টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৩ হাজার ৫৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *