ক্রমবর্ধমান করোনার ভয়াল পদধ্বনি

Slider সারাবিশ্ব


ড. মাহফুজ পারভেজ

আবার শোনা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের ভয়াল পদধ্বনি, যাকে অনেকে বলছেন দ্বিতীয় ঢেউ। কেউ কেউ বলছেন তৃতীয় ঢেউ। ২০১৯ সালের ডিসেস্বরে চীনের উহানে উদ্ভূত হয়ে বৈশ্বিক মহামারি আকারে বিস্তৃত করোনা মাঝে কিছুটা স্থিমিত হলেও আবার বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর রূপ পরিগ্রহ করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস এশিয়ায় সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর দিয়েছে।

সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছয় কোটি স্পর্শ করতে চলেছে আর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় চৌদ্দ লক্ষ, যার অধিকাংশই শীর্ষ করোনা আক্রান্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। আক্রান্তের নিরিখে পরবর্তীতে শীর্ষে থাকা ভারত ও ব্রাজিলেও বাড়ছে সংক্রমণ।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা রকমের কঠোর পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। লকডাডন, সামাজিক দূরত্বের পাশাপাশি কোথাও কোথাও কারফিউ জারি করাও খবর পাওয়া গেছে। উত্তর গোলার্ধের কানাডায় শুরু হয়েছে ২৮ দিনের লকডাউন।

ইউরোপের দেশে দেশে নেওয়া হয়েছে নানা রকমের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
আগেই করোনায় নাকাল ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানির পাশাপাশি অন্যান্য দেশও সম্ভাব্য সকল ধরনের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস এশিয়ার দেশগুলোতে করোনা বৃদ্ধির কথা জানিয়ে বলেছে, যেসব দেশ মোটামুটি নিরাপদ ছিল, সেখানেও বিপদ বাড়ছে। জাপান, কোরিয়া, হংকং এবং পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যে করোনার বৃদ্ধির হার ক্রমশ ঊর্ধমুখী।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেও করোনার প্রবল ধাক্কার লক্ষণীয় চিত্র দেখা গেছে। ভারতে বাড়ছে সংক্রমণ। রাজধানী দিল্লি করোনা ও বায়ু দূষণে নাকাল। রোগির চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। জনমনে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। গুজরাত, কেরালা, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ভারতের আক্রান্ত নগরগুলোর শীর্ষে চলে আসছে গুরুত্বপূর্ণ শহর কলকাতা।

আগেই বিশেষজ্ঞরা শীতকালে করোনা বৃদ্ধির সতর্কতা জানিয়ে ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও শীতে করোনা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, করোনা আরো মারাত্মক ও প্রলয়ঙ্করী হয়ে আঘাত হানবে।

শীতের শুরুতেই করোনার সেই তাণ্ডবের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে ক্রমবর্ধমান আক্রান্ত ও মৃত্যের পরিসংখ্যানে। এদিকে ভ্যাকসিনের জন্য নানা পরীক্ষা ও প্রয়োগ চললেও বৃহত্তর পরিসরে সরবরাহ করার মতো নিশ্চিত পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। ফলে মাস্ক ব্যবহার, হাত ধুয়া আর সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই করোনার বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা রূপে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

বিশ্বের অনেক দেশেই মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সঙ্গে সঙ্গে না পড়লে জরিমানার ব্যবস্থাও গৃহীত হয়েছে। ভিড়, জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে সামাজিক-শারীরিক দূরত্বও নিশ্চিত করা হয়েছে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসতেও লোকজনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। নিয়মিত হাত ধুয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহারেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সন্দেহ নেই, আসন্ন শীতকাল করোনার সংক্রামণের জন্য বিপজ্জনক। এ পরিস্থিতিকে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সচেতনতামূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবেলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পথে-ঘাটে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা সত্যিই হতাশাজনক। মাস্ক ব্যবহারে শৈথিল্য, অহেতুক ভিড়, হট্টগোল ইত্যাদি অবাধে চলছে। গণপরিবহণ ও গণপরিসরে সামাজিক-শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই।

বাংলাদেশের এহেন চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতি করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের জন্য সহায়ক। আর যদি ব্যাপকভাবে সমাজের নানা পর্যায়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ে, তবে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবেনা। বিপুল আক্রান্তের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার দেওয়াও হবে অসম্ভব। ডাক্তার, হাসপাতাল, বেড, আইসিইউ, ভ্যান্টিলেটারের চরম সঙ্কটে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে তখন।

ফলে কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে করোনার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের প্রলয়ঙ্করী বিপদ থেকে সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বপরিস্থিতির আলোকে সময়োচিত দ্রুততায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বরং বাঞ্ছনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *