গাজীপুর: জেলার শ্রীপুর মডেল থানায় তদন্তাধীন পোষাক শ্রমিক ধর্ষণ মামলার দ্রুত চার্জসিট দেয়ার তাগিদ দিয়েছে আদালত।
আজ গাজীপুরের জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক ভিকটিমের আবেদনের শুনানী শেষে আদালত এই আদেশ দেন।
ভিকটিমের আইনজীবী এডভোকেট মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ১০ নভেম্বর শ্রীপুর মডেল থানায় স্পর্শকাতর এই মামলা হয়। মামলার পর পুলিশ আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলার তদন্ত কাজও ঠিকমত হচ্ছে না। তাই মামলার বাদী ও ভিকটিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানী শেষে আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে ডেকে দ্রুত মামলাটির চার্জসিট দেয়ার তাগিদ দেন।
আইনজীবী আরো বলেন, এই মামলার ঘটনাস্থল, আলামত জব্দ ও মামলার তদন্ত কাজে বাঁধার সৃষ্টি করতে ভিকটিমকে হুমকি দেয়ায় কারণে আরেকটি সম্পূরক এজাহার দায়ের করা হবে। আশা করি পুলিশ বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশমতে দ্রুত তদন্ত করে মামলার ন্যায় বিচারের জন্য চার্জসিট দাখিল করবেন।
এদিকে ভিকটিম জানায়, মামলার পর প্রধান আসামীর ভাই পরিচয়ে এক ব্যক্তি কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে মােইক্রোবাসে করে তার বাসায় এসে হুমকি দেয়। পরবর্তি সময়ে একজন কলেজ শিক্ষক তাকে ফোন করে মামলা আপোষের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সবশেষ প্রধান আসামীর বন্ধু পরিচয়ে জনৈক মনির নামে এক ব্যক্তি মোবাইলে ফোনে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেয় বলে জানান ভিকটিম। তাই বর্তমানে আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ও আসামী পক্ষের হুমকির মুখে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
প্রসঙ্গত: জেলার শ্রীপুর উপেজলায় ধর্ষিতা পোষাককর্মী এখন অন্ত:সত্বা। ভিকটিমের ভাষ্যমতে, একাধিকবার ধর্ষণের মধ্যো দুইবার ধর্ষক তার বাবার হাসপাতালে ডাক্তারের চেম্বারে ধর্ষণ করেছে।
প্রথম ধর্ষণের ভিডিও ফেরত দেয়ার কথা বলে চার বছর ধরে চলে ধর্ষণ। ভিডিও দেখিয়ে জিম্মি করে হাতিয়ে নেয় ভিকটিমের চার বছরের যাবতীয় উপার্জন( ৮ লাখ টাকার বেশী)। অবশেষে অন্ত:সত্বার কথা বলায় ধর্ষক বিয়ের কথা বলে বাড়িতে নিয়ে পরিবারের লোকজন দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া ভিকটিমকে। এরপর থেকে ধর্ষক পলাতক। অত:পর একটি কলেজে হাসপাতালের পরিচালক কাম অধ্যক্ষ আপোষের কথা বলে একাধিকবার করেন দেনদরবার। টাকার বিনিময়ে ওই অধ্যক্ষ মামলা না করার জন্য চাপ দেয় ভিকটিমকে। অত:পর মামলা হলেও পুলিশ কোন আসামী ধরছে না। উল্টো ভিকটিমকে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করার মিশন চলছে। ফলে নিরাপত্তাহীন হয়ে ভিকটিম প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ঘটনাটি শ্রীপুর থানাধীন বেড়াইদের চালা গ্রামের।
ভিকটিম জানায়, ২৫ হাজার টাকা বেতনে তিনি এসকিউ নামক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতেন। একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতেন শাকিল প্রধাণ। সহকর্মীর পরিচয় থেকে ফোনে ও ফেসবুকে ঘনিষ্ঠতা। তারপর প্রেম। বিয়ের কথা বলে প্রথম ধর্ষণ। ধর্ষকের সহযোগী ৪ বন্ধু রাজিব, শামিম, সাখাওয়াত, সোহাগ করেন ধর্ষণের ভিডিও। আর এই ভিডিও দেখিয়ে ৪ বছর ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ। প্রাইভেট গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনা। বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের মধ্যো দুইবার ধর্ষণ হয় পদ্মা ডিজিটাল হাসপাতালে ডাক্তারের চেম্বারে।
পদ্মা ডায়গনষ্টিক হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ৫ জন মালিক। ৫ জনের মধ্যো ধর্ষকের পিতা শহীদুল্লাহ প্রধান ও ফুফা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম দুইজনই পরিচালক। পরিচালকের ছেলে হিসেবে শাকিল প্রথান ডাক্তারের চেম্বার ব্যবহার করতেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ম্যানেজার কামরুল হাসান।
এদিকে ধর্ষণের পর অন্ত:সত্বা ভিকটিমকে নিয়ে আপোষের দেনবার হয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের কলেজে বলেছেন ভিকটিম। তবে রফিকুল ইসলাম দেনদরবারের কথা স্বীকার করলেও দরবারের স্থান সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলেননি।
ভিকটিমের আবেদন, আমি ন্যায় বিচার চাই। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় থাকার কথা বলে ভিকটিম জানায়, আসামীরা যে কোন সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারেন। তাই রাষ্ট্রের কাছে তিনি নিরাপত্তা দাবী করছেন।