ঢাকা: বৈশ্বিক ফোরাম ‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ এর কো-চেয়ার মনোনীত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোত্তেলি’র সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধান গ্রুপটিতে যৌথভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই দায়িত্ব পালন করবেন। রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠা ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ সব কার্যকর ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স’ নামের নতুন এক প্লাটফর্ম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তিনটি বিশেষায়িত সংস্থার যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার থেকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। জাতিসংঘের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পাশাপাশি প্লাটফর্মটি গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছে প্রাণীর রোগ প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেলথ (ওআইই)। ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুদের ক্রমেই প্রতিরোধী হয়ে ওঠা বা ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স’ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে গ্রুপটি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং মন্ত্রীদের পাশাপাশি গ্রুপটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি থাকা এসব সদস্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে জীবাণু ধ্বংসে সক্ষম ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ভূমিকার রাখবেন। একই সঙ্গে জীবাণুদের ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার মারাত্মক পরিণতির বিষয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করবেন।
পাশাপাশি ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স’ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে সামর্থ্য মতো সহায়তাও দেবেন গ্রুপের সদস্যরা। বিশ্ব জুড়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ চলার মধ্যে যাত্রা শুরু করলো প্লাটফর্মটি। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স বিষয়ক আন্তঃসংস্থা সমন্বয় গ্রুপের পরামর্শে এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সমর্থনে এর সৃষ্টি। ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুদের ক্রমেই প্রতিরোধী হয়ে ওঠাকে বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ এবং পরিবেশের স্বাস্থ্যের জন্য এ পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এই পরিস্থিতিতে বিপন্ন হতে পারে খাদ্য নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) বাস্তবায়নে অর্জিত অগ্রগতি। রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে থাকলে স্বাস্থ্য সেবার ব্যয়, হাসপাতালে ভর্তি, চিকিৎসার ব্যর্থতা, অসুস্থতার তীব্রতা এবং প্রাণহানি বাড়বে বলেও সতর্ক করেন তিনি। এদিকে একদিন আগে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স বিশ্বের জন্য আরেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন। শুক্রবার গণভবন থেকে ভিডিও বার্তায় ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’র ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স’ ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বজুড়ে সবার জন্য নতুন প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিকের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিকভাবে সমন্বিত গবেষণা এবং বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেন, এটি না হলে বিশ্বকে করোনার চেয়েও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য ছিল এমন ‘আমরা লভ্য অ্যান্টিবায়োটিকের (অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স) আওতার বাইরে চলে যাচ্ছি এবং যার ফলে শিগগিরই আরেকটি বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে, যেটি হবে বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারীর চেয়েও মারাত্মক।’ শেখ হাসিনা বলেন, সন্দেহ নেই যে, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স মানুষ এবং প্রাণী উভয়ের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপজ্জনক খাদ্য উৎপাদন আমাদের বিপজ্জনক ফলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি জনগণের স্বাস্থ্য, প্রাণি এবং নিরাপদ খাদ্য ও ফসলের উৎপাদন এবং পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। বাসসের রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই উদ্যোগের সহ-সভাপতি হিসেবে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কিত আন্তঃসংস্থা সমন্বয় গ্রুপের সুপারিশগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের পক্ষে সমর্থন, কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সময়োপযোগী উদ্যোগটিকে সফল করার জন্যও বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।