হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার অধ্যুষিক তিস্তা চরে গড়ে ওঠা মটুকপুর সরকারি আশ্রয়ন কেন্দ্রে বসবাস হতদরিদ্র দিনমজুর বৃদ্ধ একরা মিয়ার (৬০)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। তবে বয়সের ভার এবং অসুস্থ থাকায় এখন দিনমজুরি করতে পারেন না। এই অবস্থায় পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তার।
ঘরে খাবার না থাকায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে মাঝে উপসে দিন কাটাতে হয়। পরিবারের এমন কষ্ট দেখে একরা মিয়ার বড় ছেলে দুলাল হোসেন (১২) নেমে পড়ে সিদ্ধ জলপাই বিক্রি করতে। বিভিন্ন গাছ থেকে জলপাই সংগ্রহ করে সে।বাড়িতে এনে তা সিদ্ধ করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বিক্রি শুরু করে। এতে দিনে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে একবেলা খাবার জোটে ছয় সদস্যের পরিবারের।
সংসারের অভাব-অনটনের কারণে পরিবার থেকে খরচ জোগান দিতে না পারায় তৃতীয় শ্রেণি থেকেই লেখাপড়া বন্ধ হয় দুলালের। পরিবারে দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় দুলাল। সাত বছর বয়সে মাকে হারায়। এরপর বাবা নতুন বিয়ে করে।
তিস্তা চরের মটুকপুর সরকারি আশ্রয়ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষ মানুষের জন্য (মামাজ) সদস্যরা দুলাল হোসেনের বাড়ির পাশে টিন দিয়ে একটি দোকান ঘর তৈরি করে মালামালসহ তাকে দোকানে বসিয়ে দিয়েছেন।
দোকান পেয়ে দুলালের পরিবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। তারা কখনো ভাবেননি তাদের নিজেদের একটি দোকান হবে।
পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মায়ের মৃত্যুর পর আট বছর বয়সে ঢাকায় গিয়ে বাসাবাড়িতে কাজ শুরু করে দুলাল। করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে ফিরে আসে নিজ বাড়িতে। এরপর কখনো সিদ্ধ জলপাই, কখনো সিদ্ধ ডিম বা আচার বিক্রি করে সংসার চালাতো সে।
সম্প্রতি কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলস্টেশনে তার সিদ্ধ জলপাই বিক্রির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেম ফেসবুকে ব্যাপক সারা ফেলে। এতে দুলালকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাকে একটি মুদি দোকান তৈরি করার জন্য সবাই অর্থ দেন। সেই অর্থ দিয়ে মালামালসহ মুদি দোকান তৈরি করে দেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষ মানুষের জন্য (মামাজ)।
মটুকপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক আবু তালেব বলেন, ‘দুলাল হোসেনের বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে অনেক কষ্টে পরিবারটি চলে। পরিবারের পাশে থেকে সবাই এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে পরিবারটির আরও উপকার হতো।’
মামাজ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘দুলালের সিন্ধ জলপাই বিক্রির দৃশ্য দেখে আমরা এগিয়ে আসি। তার পরিবার অসহায় এবং দরিদ্র। আমরা তাকে একটি মালামালসহ নতুন দোকান করে দিতে পরে অত্যন্ত খুশি।’
তিনি বলেন, মানবতার সেবায় আমরা সবসময় কাজ করে থাকি। আমাদের এই কাজ অব্যাহত থাকবে।
দুলাল হোসেনের বাবা বৃদ্ধ একরা মিয়া (৬০) বলেন, ‘অনেক দিন ধরে হামার অসুক। কাজকাম করির পাই না। হামার সোয়াটাকে (ছেলে) একটা দোকান করি দিলেন। আল্লাহ তোমাগুলাক ভালো করুক।’