করোনায় দীর্ঘ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টিউশন ফি নিয়ে আপত্তি ছিল অভিভাবকদের। প্রতিষ্ঠানই যেখানে বন্ধ, সেখানে টিউশন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কড়াকড়িতে বিস্তর অভিযোগও ছিল তাদের। এমনকি করোনার মধ্যে বন্ধ ছিল না বেতন আদায়ও। এরই মধ্যে গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে টিউশন ফি আদায়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি দিয়েছে। অভিভাবকরা মাউশির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনারও দাবি জানিয়েছেন।
মাউশি তাদের জানিয়েছে, করোনার বন্ধেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নিতে পারবে। তবে, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন বা উন্নয়ন ফিয়ের মতো আনুষঙ্গিক ফি আদায় করতে পারবে না। আর ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান এসব ফি আদায় করে থাকলে তা ফেরত দেবে বা টিউশন ফিয়ের সাথে তা সমন্বয় করবে। অপর দিকে কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সঙ্কটে থাকলে তার সন্তানের টিউশন ফিয়ের বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবে। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে যতœশীল হতে বলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।
গতকাল করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি নিয়ে এসব নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। অধিদফতর থেকে এ নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আরো বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের এমপিওভুক্ত ও ননএমপিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে, কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করতে পারবে না। আর করা হলে তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফিয়ের সাথে সমন্বয় করবে। এ ছাড়াও অন্য কোনো ফি যদি অব্যয়িত থাকে তা একইভাবে ফেরত দেবে বা টিউশন ফিয়ের সাথে সমন্বয় করবে।
এ দিকে গতকাল কয়েকজন অভিভাবক নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা অনেক আগে থেকেই টিউশন ফি মওকুফ করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। প্রথম দিকে মাউশি থেকেই বলা হয়েছিল টিউশন ফি-সহ অন্যান্য ফি বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন মানবিক হয় তার জন্য একটি নির্দেশনা দেয়া হবে। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করোনার মধ্যেও শুরু থেকেই প্রতি মাসে বেতন আদায় অব্যাহত রেখেছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকাশ বা ব্যাংকের মাধ্যমেও বেতনভাতা আদায় অব্যাহত রেখেছিল। এখন টিউশন ফি আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতি দেয়ায় আমরা হতবাক এবং হতাশও হয়েছি। আমরা মাউশির কাছে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পেলাম না।
এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা অভিভাবকদের পক্ষে করোনার শুরু থেকেই বেতনভাতা ও টিউশন ফি মওকুফের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। এখন মাউশি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা ঠিক হয়নি। কেননা অনেক নিম্ন আয়ের অভিভাবক আছেন, যারা সন্তানের টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারবেন না। তাই অতি দরিদ্র কিংবা করোনার চাকরিহারা অভিভাবকদের জন্যও বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা দরকার। অন্যথায় এই অভিভাবকদের সন্তানের পড়াশোনা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। মাউশির এই সিদ্ধান্ত অভিভাবকদের সাথে একধরনের তামাশা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।