প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতি ও শীত মৌসুমে সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ বিশ্ব মহামারিকে সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। নারী ও শিশুর প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধেও সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের একাধিক প্রশ্নের লিখিত জবাবে শেখ হাসিনা তার এই কঠোর অবস্থানের কথা জানান। সরকারি দলের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ সারাবিশ্বে এক ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এক অজানা ভাইরাস দ্বারা বৈশ্বিক মহামারি ঘটবে বিজ্ঞানীগণ এ ধরনের আশঙ্কা করলেও সেটা যে এত দ্রুত গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং তা রোগতত্ত্বের প্রচলিত ব্যাকরণগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে- সেটা কারও ধারণাতেও ছিল না। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ বিশ্ব মহামারিকে সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও যেকোনো মুহূর্তে তা আসন্ন শীতকালে আবার বেড়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ইতিমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকাতে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সংসদ নেতা এ প্রসঙ্গে জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও শীতকালে সংক্রমণ বৃদ্ধির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীন থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, আসন্ন শীত মৌসুমে যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে না পারে সেজন্য ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি বাস্তবানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রিপ্যারিডনেস এ্যান্ড রেসপন্স প্লান (বিপিআরপি)’ তৈরি করা হয়েছে এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। করোনার বর্তমান ও আসন্ন শীতকালে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশব্যাপী গৃহীত কার্যক্রমের সমন্বয়ের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক গবেষণা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে গবেষণাকে উৎসাহিত করাসহ নতুন নতুন গবেষণা প্রকল্প আহ্বান করা হচ্ছে। গবেষণায় আন্তর্জাতিক যোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে। গুজব ও ভুল তথ্য প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে প্রমাণভিত্তিক তথ্যের সংকলন প্রচার নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হবে। ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে জনসাধারণ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, যাতে সহজে আইন সহায়তা পেতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ১০৫ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে তৈরি পোশাক খাতের জন্য অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির কাছ থেকে তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আইআইবি ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চকপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসনের নির্দেশ প্রদান করেন। জাতির পিতার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায় পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাসস্থান নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে এ ধরনের ঘোষণা ও কর্মসূচি বিশ্বের আর কোনো সরকারপ্রধান এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সমাজের সম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুরোধ করবো তারা যদি সবাই অন্তত একটি বাড়ি অসহায় পরিবারের জন্য নির্মাণ করে দেয় তবে মুজিব শতবর্ষে যেমন দেশে একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না, তেমনি সবাই মিলে আমরা নির্মাণ করবো এক মানবিক ‘সোনার বাংলা’।