ইসমাইল হোসেন মাষ্টার: আজ পহেলা অগ্রহায়ন। উত্তরের ঘরে ঘরে এখন আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হওয়ায় নবান্নের ঘ্রান শোনা যাচ্ছে। আমন ধান কাটা মাড়াই চলছে পুরো দমে। বছর ঘুরে আবার এসেছে নবান্ন উৎসব। বাংলার প্রকৃতি এখন হলুদ-সবুজে একাকার। নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। সোনালি ধানের প্রাচুর্য। আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মন-প্রাণ। বাড়ির উঠানে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ।
নবান্ন উৎসব অনাদিকাল হতে বাঙালির জীবনের অংশ। লোককথায় এদিনকে বলা হয়, বাৎসরিক মাঙ্গলিক দিন। এ সময় নানা ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠাপুলির উৎসবে আনন্দমুখর হয় জনপদ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি। নতুন ধানের ভাত মুখে দেয়ার আগে কোথাও কোথাও মিলাদ, মসজিদে শিন্নি দেয়ার রেওয়াজ আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজন চলে ধুমধামে। নবান্ন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণে আমন ধান পাকার পর এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে।
নবান্ন উৎসব হিন্দুদের একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এ কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ী নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্নে শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়। এক সময় অত্যন্ত সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব উদযাপন হতো। সব মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন সমাদৃত ছিল। কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় নবান্ন উৎসব অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়।
প্রতি বছরের মতো এবারেও জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির কফি হাউস চত্বরে উন্মুক্ত মঞ্চে আজ বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে যন্ত্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ২২তম ‘নবান্ন উৎসব-১৪২৭’ এর শুভসূচনা হবে। এ উৎসবে শিশুদল হিসেবে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করবে মন্দিরা সাংস্কৃতিক পাঠশালা, দনিয়া সবুজ কুঁড়ি কচিকাঁচার মেলা ও স্বপ্নবীণা শিল্পকলা বিদ্যালয়। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বুলবুল মহলানবীশ, সমর বড়ুয়া, সুরাইয়া পারভীন, আরিফ রহমান, আঁখি বৈদ্য, অনিকেত আচার্য্য, আবিদা রহমান সেতু, মাহজাবিন রহমান শাওলী, এসএম মেজবাহ, অবিনাশ বাউল, আনান বাউল, হালিমা পারভীন, শ্রাবণী গুহ রায়, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব রায়হান, মারুফ হোসেন ও আসিফ ইকবাল সৌরভ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবেন নৃত্যজন, স্পন্দন, ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যম, নূপুরের চন্দ, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র ও নান্দনিক নৃত্য সংগঠন।
বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে নবান্ন কথন পর্বে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান সুজা। সভাপতিত্ব করবেন নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। সঞ্চালনা করবেন নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি মানজার চৌধুরী সুইট।