সম্পাদকীয়: কিসের আর্তনাদ! শব্দ বা প্রতিধ্বনি কই!

Slider সম্পাদকীয়


শব্দের প্রতিফলনের বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে প্রতিধ্বনি। রাতে ফাঁকা মাঠে জোরে শব্দ করলে সেই শব্দ আবার কিছুক্ষণ পরে শোনা যায়। এরই নাম প্রতিধ্বনি। কোন উৎস থেকে সৃষ্ট শব্দ যদি কোন মাধ্যমে বাধা পেয়ে উৎসের কাছে ফিরে আসে তবে তাকে শব্দের প্রতিধ্বনি ( Echo) বলে। কোন মাধ্যমে বাধা পেয়ে উৎসের কাছে দাঁড়ানো শ্রোতা যে প্রতিধ্বনি শুনতে পারবে তেমন কোনো কথা নেই। প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে একটি ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখতে হয়।

আমরা যদি প্রতিধ্বনি শুনতে চাই তাহলে ০.১ সেকেন্ডে শব্দকে দুইবার দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।

আমরা জানি, শব্দের বেগ = ( দূরত্ব / সময় )

V= \frac{2\times d}{t}………… (i)

এই সমীকরণের ফল আসে d= 16.6m। সুতরাং প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব 16.6 m হওয়া প্রয়োজন ।

সম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে নতুন ও নানা ধরণের কিছু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এই সব অপরাধের শব্দ অনেক সময় আমরা শুনতে পারছি না বা শুনছি না। চলমান বিজ্ঞানের যুগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সহযোগিতায় যদি ব্যাখ্যা করতে চাই তবে, প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে একটি ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব 16.6 m হওয়া প্রয়োজন। পরিস্থিতি বলছে, আমরা এখন কোন প্রতিধ্বনিই শুনতে পারছি না, শুধু শব্দ শুনতে পারছি। তাহলে বুঝতে হবে বিজ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা দূরত্ব না মানার কারণে শব্দ শুনি কিন্তু প্রতিধ্বনি নয়। বিজ্ঞানের সূত্র যদি আটকে থাকে আমাদের মস্তিস্কে তবে বিস্ফোরণের শব্দও আমরা শুনতে পাব না। যেমনটি শুনতে পাই নি বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে। প্রতিধ্বনি কেন, আমরা তো এখন, শব্দই শুনতে পাই না। শব্দ ও প্রতিধ্বনি একটাও শুনতে না পারার কারণে কোথায় কি সমীকরণ হচ্ছে তাও জানতে পারছি না। এর কারণ কি? সেটাও ভেবে দেখছি না।

যারা নিরাপত্তা দিবেন, তারাই নিরাপত্তাহীন হয়ে যাচ্ছেন। যারা সেবা দিবেন তারা খুনী হতে চলছেন। নিরাপত্তাকর্মীরা নিরাপত্তা দিতে গিয়ে আবার খুনীও হয়ে যাচ্ছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গণতন্ত্র মেরে ফেলছেন। রাষ্ট্রীয় অপরাধের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সামাজিক অপরাধও। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ সহ নতুন নতুন অপরাধও হু হু করে বাড়ছে। এই সকল অপরাধ সংঘটনের আগে আমরাই ক্ষেত্র তৈরী করে দিচ্ছি। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরা জবাবদিহিতার মধ্যে না থাকায় অপরাধের আগে ও পরে কোন শব্দই হচ্ছে না। শব্দ বা প্রতিধ্বনি কোন কিছুই শুনতে পারছি না আমরা। এই অবস্থা চলমান থাকলে বন্ধি বা জিম্মি হয়ে পড়বে রাষ্ট্র ও সমাজ।

পর্যালোচনার তথ্য বলছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপদ জায়গা অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। অনিরাপদ জায়গায় নিরাপত্তা আটকে যাচ্ছে। কেমনজানি মিলছে না কোন সমীকরণ। শব্দ ও প্রতিধ্বনি কোথায় কি হচ্ছে! আমরা জানতে পারছি না। এর কারণ যদি এমন হয় যে, আমাদের শ্রবনশক্তি লোপ পেয়েছে বা স্বারণশক্তি কমে গেছে, তাহলে শুনা ও মনে রাখা দুস্কর। আমরা শুনেও শুনছি না বা শুনেও মনে রাখতে পারছি না। এমনটি হল লক্ষ্যণ বেমালুম বিপদের।

কোন অপরাধ সংঘটনের আগে আমাদের জানতে হবে। না জানতে পারলে পরে হলেও প্রতিধ্বনি শুনতে হবে। তাতেও ফেল করলে প্রতিধ্বনির উৎস জানতেই হবে। শুনলেই হবে না, মনেও রাখতে হবে। না হলে আমরা শ্রবনপ্রতিবন্ধি হয়ে যাব। মানুষ থেকে বিকলাঙ্গ মানুষে পরিণত হলে আমরা সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন বা পরিচালনা, কোনটির জন্যই যোগ্য হতে পারব না। পুরোপুরি অযোগ্য হয়ে যাব। মানুষ অযোগ্য হলে রাষ্ট্র অকার্যকর শুধু নয়, রাষ্ট্র অকেজোও হয়ে যাবে।

সুতরাং রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক অপরাধ সংঘটনের আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে কোন অপরাধ কে অপরাধ হিসেবেই দেখতে হবে, বিশেষ অপরাধ বা বিশেষ অপরাধী হিসেবে নয়।

রিপন আনসারী
প্রধান সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *