ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্রিসেটি ফোনে জানালো, তুমি ডেটিংয়ে যাচ্ছো। আমি বিস্মিত হলাম। তাকে বললাম, আমি। কিন্তু আমার মতো চল্লিশে দাঁড়ানো পেশাদার একজন সিঙ্গেল নারীর পক্ষে জনমানুষের দৃষ্টিতে ডেটিংয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না। আমেরিকার নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ঞযব ঞৎঁঃয ডব ঐড়ষফ’ বইতে লিখেছেন তার বেড়ে ওঠা, ব্যক্তিজীবন, রাজনীতির নানা অধ্যায়।
আজ পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো তার দ্বিতীয় অংশ:
ছয় মাস আগেও আমি জানতাম না কে এই ডগ (ডগলাস)? আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্রিসেটি একের পর এক ফোন করে আমাকে জ্বালিয়ে যাচ্ছিল। আমি তখন একটি মিটিংয়ের মধ্যে। আমার ফোন একটানা বেজেই চলেছে।
প্রথম দিক থেকে তার ফোন বেশ কবার এড়িয়ে গেলাম। কিন্তু একটি দুশ্চিন্তা পেয়ে বসলো আমাকে। তার সন্তানরা আমার কাছে গডচাইল্ডের মতো। তাদের কি কিছু হলো?
আমি মিটিং থেকে বেরিয়ে তাকে ফোন করলাম।
‘কি হয়েছে, সবকিছু ঠিক আছে তো?’
‘হ্যাঁ সবকিছু ঠিক আছে?’
‘তুমি একটা ডেটিংয়ে যাচ্ছো’ সে বললো।
এতে আমি বিস্মিত হলাম এবং বললাম ‘আমি!’
‘তুমি-ই’ সে নিশ্চিত হয়ে জোর দিয়ে কথাটি বললো।
আমি মাত্রই তার সঙ্গে কথা বললাম। সে দেখতে ভালো এবং একটি ল’কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার। আমার বিশ্বাস তাকে তোমারও ভালো লাগবে। মূলত সে লস অ্যাঞ্জেলসে কাজ করে আবার তুমিও কোনো না কোনোভাবে ওখানে কাজ করছো।
ক্রিসেটি আমার বোনের মতো। আমি জানি, তার সঙ্গে কোনো কিছু নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।
‘তার নাম কি?’ আমি জানতে চাইলাম।
তার নাম ডগ এমহাফ। কিন্তু কথা দিতে হবে তুমি তাকে গুগলে খুঁজবে না। বেশি চিন্তা করো না। তুমি তার সঙ্গে দেখা করো।
আমি তোমার নম্বর ইতিমধ্যেই তাকে দিয়েছি। সে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
কিছুটা দীর্ঘশ্বাস সত্ত্বেও ক্রিসেটির এই প্রস্তাবকে সমর্থনই করলাম। সে একমাত্র মানুষ যাকে আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের সবকিছু খুলে বলতে পারি। আমার মতো চল্লিশে দাঁড়ানো পেশাদার একজন সিঙ্গেল নারীর পক্ষে জনমানুষের দৃষ্টিতে ডেটিংয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না।
আমি জানি, কোনো অনুষ্ঠানে যদি একজন পুরুষকে আমার সঙ্গে নিই তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের সম্পর্কে নানারকম কথা বলতে শুরু করবে লোকজন। আমার এটাও জানা একজন সিঙ্গেল নারীর জন্য রাজনীতি আর পুরুষের জন্য রাজনীতি এক নয়। সামাজিক জীবনেও এই দু’টি বিষয় দু’ভাবেই দেখা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন পুরুষের ব্যাপারে নিশ্চিত না ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে আমন্ত্রণ জানানোর আমার কোনো আগ্রহ নেই। এজন্যই বছরের পর বছর আমার ব্যক্তিগত জীবনকে ক্যারিয়ার থেকে আলাদা রেখেছি।
ক্রিসেটির সঙ্গে এমন কথা বলার কয়েক রাত পরে আমি এক অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলাম। তখন অজ্ঞাত এক নম্বর থেকে একটি টেক্সট পেলাম। ডগ তার বন্ধুদের নিয়ে বাস্কেটবল দেখছিল এবং সেখান থেকেই সে সাহস করে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে।
‘হাই, আমি ডগ। শুধুই ‘হাই’ বলতেই টেক্সট। আমি লেকারস গেম দেখছি।’
আমিও তাকে ‘হাই’ বলি এবং পরবর্তী কোনো একদিন দেখা হবে জানাই। এরপর আমার নিজের ভেতরেই সচেতনতা জেগে ওঠে। লেকারসদের পক্ষেই যাও, যদিও আমি বাস্তবে ওয়ারিয়রস দলের একজন ভক্ত।
পরদিন সকালে আমি কাজে যোগ দেয়ার আগে যখন জিম থেকে ফিরছি তখন ডগের একটি মিসড কল দেখতে পাই। যদিও আমি তাকে বলে রেখেছি আমাদের নির্ধারিত দিনে দেখা হবে তাই আগেভাগে তার ফোন প্রত্যাশা করিনি। আমি তা সানন্দে গ্রহণ করি। আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন ডগ আমার পাশেই বসে। তার কাছে আমি জানতে চাই কেন সে সেদিন ফোন করেছিল:
আমার জিজ্ঞাসায় ডগ যা বললো, আমি খুব সকালে সেদিন ঘুম থেকে উঠি। সকালে আমার একটি মিটিং ছিল। আমি গাড়ি নিয়ে অফিস রওয়ানা হচ্ছিলাম কিন্তু তখনও মন থেকে তোমাকে সরাতে পারিনি। যদিও সকাল সাড়ে আটটা। অনেক সকাল। ব্যাপারটা আমার কাছে উদ্ভট ছিল। এটা আমি নই। এটা ঠিক না। তাকে ফোন করা ঠিক হবে না। এবং ফোন বাজতে লাগলো। ডগের পাঠানো সেই ভয়েজ মেইল এখনো আমার কাছে আছে। তার সেই শব্দ এখনো কানে বাজে। আমি তাকে আরো জানতে শুরু করি। ডগ নিশ্চিত করেই দেখতে সুন্দর তবে সে-ও সুযোগ খুঁজছিল। সে ভেবেছিল তার পাঠানো ভয়েজ মেইল বোধ হয় তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে এবং তার সঙ্গে আমি আর যোগাযোগ করবো না। সে আমাকে আর ফোন করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকে এবং প্রথম ফোনের জন্য নানারকম ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু ভাগ্য বলে কিছু আছে। যা হবার তাই হবে। আমি সান ফ্রান্সিসকোতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনি। কয়েক বছর ধরে রান্নাঘরের প্রয়োজনে কিছু সঞ্চয় করার চেষ্টা করি এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছিলাম। ঐদিন আমি কনট্রাক্টর এবং তার দলের লোকদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যেন তাদের কাজ বুঝিয়ে দিতে পারি এবং তাদের কাছে চাবি রেখে যেতে পারি। যখন অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছালাম তখন জানতে পারি কনট্রাক্টর আসতে দেরি হবে। ফলে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। অন্যভাবে বলা যায়, আমার মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আমি ঘণ্টাখানেক সময় পাই। যেটা আমার জীবনে কখনো ঘটেনি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ডগকে একটি ফোন করি, নিশ্চয়ই তারও এখন মধ্যাহ্ন ভোজের সময়।
সে ফোন ধরলো এবং পুরো এক ঘণ্টা আমরা ফোনে কথা বলে শেষ করলাম। এরমধ্যে রাজ্যের যত কথা আছে সব বলা হয়ে গেল। আমার কাছে মনে হলো যে আমরা দু’জনই নিজেদের যথেষ্ট বেশি পরিপূর্ণতা এবং আগ্রহ প্রকাশের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। আমার মনে আছে বেশিরভাগ সময়ই একজন আরেকজনের কাছ থেকে কথা কেড়ে নিচ্ছিলাম। কৌতুক করছিলাম, হাসছিলাম, মজা করছিলাম। ঠিক এখনও যেমন আনন্দে মেতে থাকি। এরইমধ্যে কন্ট্রাক্টর চলে এলো এবং ডগকে দেখার জন্য আমার ভেতর গভীর এক আগ্রহ তৈরি হলো। লস অ্যাঞ্জেলেসে গত শনিবার রাতে নৈশভোজের সময় ঠিক করি এর জন্য কোনোভাবেই তর সইছিল না।