জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তার মানে এই না যে, তিনি এখনি তার আসবাবপত্র ১৬০০ পেনসিলভেনিয়া অ্যাভেনিউতে অবস্থিত হোয়াইট হাউসে স্থানান্তর করতে পারবেন। এর আগে কিছু কাজ করতে হবে।
এই প্রক্রিয়া সাধারণত নির্ঝঞ্ঝাট হয়, তবে এবার কিছু জটিলতা থাকতে পারে যেহেতু এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা হতে পারে।
জো বাইডেন কখন প্রেসিডেন্ট হবেন?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে লেখা আছে যে প্রেসিডেন্টের নতুন মেয়াদ শুরু হবে জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখে, দুপুর বারোটায়।
ক্ষমতা গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় রাজধানী ওয়াশিংটনে জাঁকজমকপূর্ণ একটি ‘অভিষেক’ অনুষ্ঠান দিয়ে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে শপথ পাঠ করান।
অর্থাৎ, জো বাইডেন এবং কমালা হ্যারিস জানুয়ারি ২০, ২০২১-এ শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
এই সময়সূচীতে ব্যতিক্রম হয়, যদি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে থাকাকালে পদত্যাগ করেন বা মারা যান। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রান্সিশন বা উত্তরণের সময়টা কী
নভেম্বরে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা এবং জানুয়ারির ২০ তারিখে নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের মাঝের সময়টি ‘ট্রান্সিশন’ বলা হয়।
নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একটি ‘ট্রান্সিশন টিম’ গঠন করেন, যার কাজ হলো ক্ষমতা গ্রহণ করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। বাইডেন টিম ইতোমধ্যেই একটি ট্রান্সিশন ওয়েবসাইট চালু করেছে।
তারা জো বাইডেনের মন্ত্রীসভার জন্য সম্ভাব্য সদস্য চিহ্নিত করবেন, নতুন সরকারের নীতি কী হবে, কোন বিষয়ে তারা অগ্রাধিকার দেবে, সেগুলো আলোচনা করবেন এবং দেশ চালানোর জন্য প্রস্তুতি নেবেন।
এই টিমের সদস্যরা বিভিন্ন ফেডারেল দফতরে গিয়ে তাদের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনবেন, যেমন কোন কাজের ডেডলাইন কী, কত বাজেট আছে, মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কর্মচারীরা কী কাজ করেন ইত্যাদি।
বিভিন্ন অফিসে যারা বাইডেন প্রশাসনের হয়ে নতুন কাজ করতে আসবেন, ট্রান্সিশন টিম এসব তথ্য তাদের জন্য সংগ্রহ করেন, এবং জানুয়ারির ২০ তারিখের পরও সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।
চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতের ছবি দেখে বোঝা গিয়েছিল দু’জনের মাঝে উষ্ণতার কত অভাব ছিল – এবং যা এখনো আছে।
জো বাইডেন গত কয়েক মাস ধরে তার ট্রান্সিশন টিম গঠন করেছেন, তা পরিচালনা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন এবং গত সপ্তাহে তিন একটি ওয়েবসাইট চালু করলেন।
আগামী দিনগুলোতে কোন শব্দগুলো বেশি শোনা যাবে?
প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বা নির্বাচিত-প্রেসিডেন্ট : যখন কোন প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেন কিন্তু শপথ গ্রহণ করেননি – যা হবে জানুয়ারির ২০ তারিখে- সে সময় তাদের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বলা হয়।
ক্যাবিনেট বা মন্ত্রিসভা : জো বাইডেন শিগগিরই ঘোষণা দেবেন তার মন্ত্রিসভায় তিনি কাদের রাখবেন। মন্ত্রিসভা আমেরিকার সরকারের সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের টিম। ক্যাবিনেটে সকল ফেডারেল সরকারি বিভাগ এবং এজেন্সির প্রধানরা থাকেন।
কনফার্মেশন হেয়ারিং বা শুনানি : প্রেসিডেন্ট যাদের সরকারের উচ্চ পদে নিয়োগ করেন, তাদের অনেকের সেনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। বাইডেনের মনোনয়ন করা কর্মকর্তাদের সেনেটের সদস্যরা একটি কমিটি হেয়ারিং বা শুনানিতে প্রশ্ন করেন, তারপর কমিটির সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করেন।
কেলটিক : প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হিসেবে জো বাইডেন মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস থেকে বাড়তি নিরাপত্তা পাবেন এবং তার কোড নাম হচ্ছে কেলটিক। প্রার্থীরা নিজেদের কোড নাম বাছাই করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মোগল এবং কমলা হ্যারিস নিজের জন্য ‘পাইওনিয়ার’ বাছাই করেছেন।
ট্রান্সিশন কালে কমলা হ্যারিস কী করবেন?
কমলা হ্যারিস, আমেরিকার প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট, নিজের দফতরের জন্য কর্মচারী নিয়োগ করবেন এবং পূর্ববর্তী প্রশাসনের কাছ থেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জানবেন।
ভাইস-প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উয়িং-এ অফিস করেন, কিন্তু তিনি সেখানে বাস করেন না। ঐতিহ্য অনুযায়ী তারা ইউ এস নেভাল অবজারভেটরি প্রাঙ্গণে বাস করেন যেটা শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। কমলা হ্যারিসের স্বামী ডাগ এমহফ একজন আইনজীবী যিনি বিনোদন শিল্পে কাজ করেন।
সূত্র : বিবিসি