বিশেষ প্রতিনিধিঃ পিরোজপুরের নাজিরপুরে রুমা দাস নামে এক উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও জাতিয় পরিচয়পত্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকুরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই গ্রামের শ্যামল কুমার দাস গত ১০ ই আগষ্ট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক ও যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত এ অভিযোগ করেন। অভিযোগে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেটে (এস.এস.সি) দু’টি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত অনিয়ম করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নাজিরপুর উপজেলার শাঁখারীকাঠী গ্রামের মৃত রনেন্দ্রনাথ ঢালীর বড় মেয়ে। অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুমা দাস ১৯৯১ সালে যশোর বোর্ডের অধীনে উপজেলার শাঁখারীকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে গৌরী ঢালী নামে বিজ্ঞান শাখায় ৩য় বিভাগে এস এস সি পাশ করেন। যাহার রোল নং-ম-১৪৯ নিবন্ধন নং- ৬০৯৯৩, শিক্ষাবর্ষ-১৯৮৯-৯০ । আবার একই ব্যক্তি রুমা দাস নামে এবং মুক্তিযোদ্ধা পিতার নামের পদবী এবং বয়স পরিবর্তন করে ১৯৯৪ সালে যশোর বোর্ডের অধীনে ঝালকাঠী জেলার শাওরাকাঠী নব আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় ২য় বিভাগে পাশ করেন। যাহার রোল নং-১০৪১৬৫,নিবন্ধন নং-১৩০৬০৪, শিক্ষাবর্ষ-১৯৯২-৯৩। অভিযোগকারীর অভিযোগ বোর্ড থেকে নিজের ও বাবার নাম, বংশ পদবী এবং জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে পূর্ববর্তী সনদ প্রাপ্তীর বিষয়ে বেমালুম গোপন রেখে দুরবর্তী জেলা ঝালকাঠী সদর উপজেলার সাওরাকাঠী নব আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় দ্বিতীয় বিভাগে এস এস সি পাশ করার সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারি চাকুরি করছেন এবং সেই সার্টিফিকেটটিতে পিতার নাম,বিদ্যালয়ের নাম, পাশের সন, শাখা এবং জন্ম তারিখে ওভার রাইটিং স্পষ্ট আকারে দেখা যাচ্ছে। যেখানে তিনি তার নিজের নাম রুমা দাস পিতা-রনেন্দ্রনাথ দাস রেখেছেন। তিনি তার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে পূর্বের সনদের অর্থাৎ গৌরি ঢালী নামে এস এস সি সার্টিফিকেটে ০১/০৬/১৯৭৬ তারিখের পরিবর্তে নতুন সার্টিফিকেটের ০৫/০৪/১৯৭৮ বয়স রেখে এস এস সি সার্টিফিকেট তৈরী করেন। একই ডিগ্রীর দুই সনদে ব্যবহার করা হয়েছে পৃথক পৃথক জন্ম তারিখ। অভিযোগের ভিত্তিতে সেই জালিয়াত সনদ দিয়ে তিনি ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত স্থানীয় এমপিওভুক্ত বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তর শাঁখারীকাঠী নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি কৃষি শিক্ষক হিসাবে ৯ বছর চাকুরি করেছেন এবং সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করেছেন । কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে তার বিরুদ্ধে ওই সার্টিফিকেট জালিয়াতীর অভিযোগ ওঠায় তিনি সে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে একই সনদে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকুরি করেন । বর্তমানে তিনি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদ্দিখানে কর্মরত আছেন। উল্লেখিত গৌরী ঢালী ও রুমা দাস একই ব্যক্তি। তার মৃত পিতা রনেন্দ্রনাথ ঢালী একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা তাহার (লাল মুক্তি বার্তা নম্বর ০৬০৫০২০৩২৩, বেসামরিক গেজেট নম্বর-১৩৪৮, সাময়িক সনদ নম্বর ৭০৬২০) । এখানেই উল্লেখ্য থাকে যে,মুক্তিযোদ্ধাসনদ ভোটার লিষ্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সহ সর্বত্র তার বংশ পদবী “ঢালী” বাস্তবে রনেন্দ্রনাথ দাস নামে কোন ব্যক্তির অস্তিত্ব নাই বলে জানা গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে গত পহেলা সেপ্টেম্বর বরিশাল বিভাগের কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ ও পিরোজপুর জেলার উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় নাজিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসে রুমা দাসের সকল কাগজপত্রসহ সঠিক তথ্য যাচাইয়ের জন্য তদন্ত করে রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন নি। এছাড়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেন ও যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র রুমা দাসের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত অভিযোগ সঠিক তদন্তের জন্য শাঁখারীকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেন।
শাঁখারীকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন মুজুমদার জানান গৌরি ঢালী এই বিদ্যালয় থেকেই ১৯৯১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এস এস সি পাশ করে এবং সেই সার্টিফিকেট তার পিতার স্বাক্ষর দিয়ে উত্তোলন করে নেন।
সাওরাকাঠী নব আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুন অর রশিদ জানান আমি এই বিদ্যালয়ে নতুন এসেছি করোনার কারনে স্কুল ও বন্ধ কাগজ পত্র না দেখে কিছু বলতে পারব না।
৫ নং শাঁখারীকাঠী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান গাউস জানান রুমা দাস পিতা রনেন্দ্রনাথ দাস নামে কোন ব্যক্তি আমার ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় নাম নেই এবং তাদের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় নাই।
৬ নং নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন খান জানান রুমা দাস পিতা রনেন্দ্রনাথ দাস, তার ইউনিয়নের ভোটার তবে তারা স্থায়ী বাসিন্দা নয়। মূলত তারা স্থায়ী বাসিন্দ শাঁখারীকাঠী ইউনিয়নের।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রুমা দাস মুঠো ফোনে জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। তিনি ‘গৌরী ঢালী’ নন, তিনি রুমা দাস। তার পিতার জমি জোর করে দখল করতে স্থাণীয় অভিযোগকারী শ্যামল দাস তাকে অহেতুকভাবে হয়রানী করতে কৌশল হিসাবে এ অভিযোগ করেন।