ঢাকা: দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমিই বেদখল হয়ে আছে। প্রায় ৯০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে এসব জমি দখল করেছেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সোমবার এসব তথ্য জানায় বন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বনভূমি বেদখল হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। জেলাটিতে ৫৯ হাজার ৪৭১ হাজার একর বনভূমি বেহাত হয়েছে।
বৈঠকে বন অধিদপ্তর বেদখল হওয়া বনভূমির তথ্য জানালেও কারা এসব জমি দখলে রেখেছেন তা লিখিতভাবে জানায়নি। কারা এসব জমি দখল করেছে ও এখন কী অবস্থায় আছে, তা বিস্তারিত জানাতে বন অধিদপ্তরকে বলেছে সংসদীয় কমিটি। তবে বন অধিদপ্তর মৌখিকভাবে জানিয়েছে প্রায় ৯০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে এসব বনভূমি।
বন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, সংরক্ষিত, বিজ্ঞপ্তিত, রক্ষিত, অর্জিত বা অর্পিত ও অশ্রেণিভুক্ত মিলিয়ে দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। প্রতিবেদনে বনভূমি বেদখলের কারণ হিসেবে বলা হয়, সিএস রেকর্ড মূলে রেকর্ডভুক্ত বনভূমি পরবর্তীতে এসএ/আরএস/বিএস জরিপে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। খাস খতিয়ানভুক্ত বনভূমি (সংরক্ষিত বনভূমি ছাড়া অন্যান্য যেমন রক্ষিত, অর্পিত বনভূমি) অনেক ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্ত দিয়েছে। এ ছাড়া বনভূমির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ বিশেষ করে সড়ক নির্মাণের ফলে এর দু পাশে বনভূমি দখলের প্রবণতা বেড়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বনভূমি দখল করে কৃষি কাজ, স্থায়ী স্থাপনা, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। অনেক দখল করা বনভূমিতে শিল্প-কারখানাও স্থাপন করা হয়েছে বলে বন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গেলে শিল্পপতি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আদালতে মামলা করে স্থিতাবস্থা বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া উচ্ছেদের কাজে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অসহযোগিতা করে।
অন্যদিকে বন বিভাগের প্রয়োজনীয় জনবলেরও অভাব রয়েছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে বন বিভাগ।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বনভূমি দখলকারীদের তালিকা চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। এই তালিকা প্রকাশ করা হবে। এখন পর্যন্ত এসব উদ্ধারে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আইনজীবী হিসেবে কারা আছেন এসব জানাতে বলা হয়েছে। অনেক প্রভাবশালীও বনভূমি দখল করেছেন। জবরদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করা এখন সংসদীয় কমিটি ও মন্ত্রণালয়ের এক নম্বর অগ্রাধিকার। এক ইঞ্চি জমিও বেদখলে রাখা যাবে না।