এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা বাতিল হলেও এ বছর তিন ক্যাটাগরিতে মেধা যাচাই পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে শিক্ষার্থীদের। গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিন্ন প্রশ্নে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়ায় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত না হলেও ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে গুচ্ছ পদ্ধতিতেই এবারের অনার্সে ভর্তিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলো আগের নিয়মেই শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতেই ভর্তি নেবে।
এ দিকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং পরিচালনায় স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন যেহেতু এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে, তাই অন্তত ভর্তি পরীক্ষা এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের কিছুটা সুযোগ থাকে। অন্যথায় শিক্ষার উচ্চতর পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের ভিড়ে মেধাবীরাও হারিয়ে যেতে পারে।
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পরীক্ষা নেয়া হবে। আর এই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে অনলাইন মাধ্যমে। একটি অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে বা অফলাইনে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ জন্য একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হচ্ছে।
এর আগে গত শনিবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর কিভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে সেই বিষয়ে এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অংশগ্রহণ করেন। করোনা মহামারীর কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনার্স পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন তারা।
ভিসিদের সংগঠন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানিয়েছেন, যেহেতু এ বছর করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষাই বাতিল করা হয়েছে, তাই আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি ন্যূনতম মেধা বা যোগ্যতা যাচাই করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তারপরেই বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোনাজ আহমেদ নূরের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।
সভা সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেয়া কঠিন হওয়ায় সব ভিসি অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার দিকে জোর দিয়েছেন। এ ছাড়া সভায় পরীক্ষা নেয়ার মতো উপযোগী একটি ডামি (নমুনা) সফটওয়্যার উপস্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। সফটওয়্যারটি তৈরির কাজ শেষ হলে সেটি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে অনুমোদন নিয়ে তা কার্যকর করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর সমন্বিত পদ্ধতিতে কৃষি, প্রকৌশলী এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভাবে পাঁচটি ধাপে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। তার মধ্যে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং মানবিক বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। পরীক্ষা নেয়ার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। এটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রক্টর রিমোট এক্সাম সিস্টেম (প্রোকয়াস)’। এটি ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা ও অভ্যন্তরীণ একাডেমিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে।
বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষা এ বছর হলো না, তাই বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে একটি পরীক্ষা নেয়া জরুরি। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এই পরীক্ষা নেয়া হবেÑ সেটা নিয়ে আরো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আর নতুন যে সফটওয়্যারের কথা বলা হচ্ছে সেটা কতটুকু কার্যকর হবে, সেটাও এখনো বলা যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, আমরা গত জানুয়ারি থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একটি অভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে সম্পৃক্ত হতে রাজি না হওয়ায় আমরা এগোতে পারিনি। এখন আমরা নতুনভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য কাজ শুরু করেছি। আশা করছি এই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সবাই অংশ নেবে।