চট্টগ্রাম: পুলিশের অভিযানের তোপে শুক্রবার দিনগত গভীর রাতে চোখ বাঁধা অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসির মোড়ে অপহৃত সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে ছেড়ে দিল যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা ও তার সহযোগীরা। মোটরসাইকেলযোগে এসে ব্যবসায়ীকে রেখে যান তারা। পরে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তিনি বাসায় পৌছেন বলে জানান অপহৃতের স্ত্রীর বড় ভাই তামিম।
শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, অপহরণের পর থেকে পরিবারের সবাই চরম উৎকণ্ঠায় ছিলাম। অবশেষে প্রশাসনের প্রচেষ্টায় তিনি জীবিত ফিরেছেন।
তামিম জানান, কমিশন ব্যবসার জের ধরে শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকার বউবাজারের দুলহান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ফিল্মি কায়দায় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়। সাইফুল ইসলামের সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কমিশন ভোগ করা যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে অপহরণের এই ঘটনা ঘটনায়। ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় হালিশহর থানায় একটি মামলা (১৯/২০২০) দায়ের করেন অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী সাইফুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।
এতে যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা ছাড়াও আরও যাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন নওশাদের ভাই পাপ্পু, মোহাম্মদ মাসুদ ওরফে পাগলা মাসুদ, বউবাজার ঈদগাঁ এলাকার ইকবাল, সাখাওয়াতসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজন। হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সিনহা জানান, অভিযোগ পেয়ে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধারে প্রথমে অভিযুক্ত রানার মেহেদীবাগের বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে না পেয়ে তার পুরানো বাড়ি চান্দগাঁও এর গোলাম নাজির আলী বাড়িতেও অভিযান চালায় পুলিশ।
কিন্তু কোথাও থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পরে এক আওয়ামী নেতার ডাকে ভিকটিমের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, যুবলীগের শীর্ষ এক নেতা ও হালিশহর থানা পুলিশের একটি টিম বৈঠকে বসে। এর মধ্যে সিএমপির উপ কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল হকের চাপে ভিকটিম সাইফুল ইসলামকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মোটরসাইকেলে করে নগরীর জিইসির মোড়ে রেখে আসেন রানার লোকজন। পরে তিনি একটি সিএনজি অটোরিক্সায় বাসায় পৌছেন।
মিরসরাইয়ের অধিবাসী সাইফুল ইসলাম পরিবার পরিজন নিয়ে নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে বসবাস করেন। হালিশহর থানায় দায়ের করা অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম স্ত্রীসহ ছেলেমেয়ে নিয়ে শুক্রবার দুপুরে নিজের প্রাইভেট গাড়িতে করে হালিশহর থানার বউ বাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে নিকট আত্নীয়ের বিয়েতে যান। বিয়ের দাওয়াত শেষে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠার সময় আগে থেকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা (৫৩) এবং তার ড্রাইভার মুহাম্মদ ইকবালসহ ১০/১৫জন সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে মারধর করে এলটি সিলভার কালার নোহা গাড়িতে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। সাইফুল ইসলামকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা লোকজন বাধা দিলে তাদের লাঠি ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে দ্রুত বউ বাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি স্থান ত্যাগ করে অপহরণকারীরা।
এ বিষয়ে অপহৃতের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে এমন অপহরণ আমাদেরকে হতবাক করেছে। আমরা থানাসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করেছি। পুলিশের অভিযানের মুখে অবশেষে আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত পেয়েছি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে অপহরণের পর পুলিশও সাইফুল ইসলামের হদিস পাচ্ছিল না, তখন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে প্রশাসনের অব্যাহত চাপ এবং মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের যৌথ সমঝোতা বৈঠকের পর অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়। এর আগে পুলিশের অভিযানের তোপে শুক্রবার মধ্যরাতে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা ওই আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানে নগর যুবলীগের একাধিক শীর্ষ নেতাও উপস্থিত হন।
খবর পেয়ে নগর আওয়ামী লীগের ওই নেতার বাসার সামনে পুলিশের চারটি গাড়ি অবস্থান নিয়ে চাপ সৃষ্টি করে। এরপরই মূলত ব্যবসায়ী সাইফুলকে মুক্তি দিতে সম্মত হন তারা। হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সিনহা বলেন, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।