জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মানুষকে উৎসাহিত করছি যে, এক ইঞ্চি জমিও কেউ ফেলে রাখবেন না। গাছ লাগান, ফল লাগান, তরিতরকারি লাগান। যে যা পারেন কিছু লাগিয়ে নিজের উৎপাদন বাড়ান। তিনি বলেন, খাদ্যটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই খাদ্য নিশ্চয়তা যদি আমরা দিতে পারি, আমাদের মানুষগুলো আমরা বাঁচাতে পারি, সেই সঙ্গে মানুষও কাজ পায়। প্রত্যেককে উৎসাহিত করি, যার যেটুকু জমি আছে সবাই যেন কাজ করেন।
বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২০ উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা কাজের লক্ষ্য কৃষকদের সুবিধা দেয়া। সেদিকে লক্ষ্য রেখে যখনই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে, তখনই আমরা সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি খাদ্য উৎপাদনে।
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করেছি আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
খাদ্য নিশ্চয়তা রাখতে হবে। কারণ এই করোনা ভাইরাসের কারণে যখন সারাবিশ্ব স্থবির, তখন একটা দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে যেন তার প্রভাব না পড়ে, বাংলাদেশের মানুষ যেন এ ব্যাপারে কোনো কষ্টভোগ না করে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্বকে ক্ষুধামুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন এই বিশ্বকে আমরা ক্ষুধামুক্ত করি। আর বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের একটাই চিন্তা জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা তা অর্জন করতে পারব।
দেশের মানুষের সংগ্রাম তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত সাহসী এবং তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত ক্ষমতা রাখে। এই করোনার সঙ্গে ঝড়, বন্যা সবই মোকাবেলা করে যাচ্ছি আমরা। কাজেই এভাবে আমাদের বাঁচতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে।
জনগণের খাদ্য নিরাপত্তায় সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাটা যাতে নিশ্চিত থাকে, প্রতিটি মানুষের ঘরে যেন খাবার পৌঁছে সেজন্য হতদরিদ্র যারা আমরা তাদের মাঝে বিনা পয়সায় খাবার দিয়ে যাচ্ছি এবং এটা অব্যাহত রাখব সব সময়। একটি মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে, তাদের দোরগোড়ায় আমরা চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিচ্ছি এবং কোনো মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগবে না। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মানুষকে সহায়তা দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেন খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টির নিশ্চয়তা হয়, মানুষ যেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। মহামারীর মধ্যে সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তা জিডিপির চার শতাংশ উল্লেখ করে কৃষকদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়ার কথা জানান শেখ হাসিনা।
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে সরকার সহায়তা করছে জানিয়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকার বিশেষভাবে উৎসাহিত করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ক্ষেত্রে আমরা তিন হাজার ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি এবং খুব অল্প মূল্যে যেন তারা কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করতে পারে, বাকি অর্থ সরকারের পক্ষ থেকেই দেয়া হচ্ছে।
কৃষি সহায়তার জন্য সরকার ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটা আমরা কৃষি সহায়তা হিসেবে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করি, যাতে কৃষক তাদের উৎপাদনে উৎসাহ না হারায়, তারা যেন উৎপাদন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের নেশনের মহাপরিচালক কু ডংইয়ু ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন। এ সময় গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল প্রান্তে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।