ঢাকা-৫ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আজ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দৌড়ানি দিয়ে আপনারা প্রমাণ করেছেন শহীদ জিয়ার কর্মীরা মরে যায়নি।
এসময় তিনি বলেন, ১৭ তারিখ কেন্দ্রে কেন্দ্রে আমি নিজে থাকবো। কোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড হলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। আমাদের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করলে আমরা জনগণকে নিয়ে ডেমরা-যাত্রাবাড়ীর সকল রাস্তা অবরোধ করে এখান থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবো।
বুধবার নির্বাচনী পথসভা ও র্যালীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ এর প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মনিরুল ইসলাম মনু আপনি সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতা। আপনি সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সন্ত্রাসী বাহিনী আজ আমাদের উপর হামলা করেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমরা নির্বাচনের শেষ সময় পর্যন্ত শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মাঠে থাকবো।
এসময় তার ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আজ থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আওমী সন্ত্রাসীরা দৌড়ের উপরে থাকবে। তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।
উল্লেখ্য, আজ বুধবার যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ গেটে সকাল ১১টায় পূর্বঘোষিত পথসভা শুরু করেন। এতে অংশ নেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর দক্ষিন বিএনপির সাধারন সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আকবর হোসেন নান্টু, যুবদলের সাধারন সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, শ্রমিকদলের সাধারন সম্পাদক মাহবুব আলম বাদল, সিনিয়র সহ সভাপতি সুমন ভুঁইয়া, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ভাণ্ডারী সহ সহাস্রাধিক নেতাকর্মী।
পরে সমাবেশের শেষ দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন ঠিক তখন শহীদ ফারুক সড়ক থেকে ২০-২৫ জন আওমীলীগ এর সমর্থক এসে হামলা চালায়। হামলার এক পর্যায়ে বিএনপির কর্মীরা তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে সালাহউদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে একটি নির্বাচনী মিছিল নিয়ে শহীদ ফারুক সড়কের দিকে যায় বিএনপি কর্মীরা।
এসময় শহীদ ফারুক সড়কে অবস্থিত আওয়ামীলীগ প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস থেকে আবার ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় বিএনপির কর্মীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে আওমী সমর্থকরা তাদের অফিসের সাটার লাগিয়ে দেয়। পরে নিরাপত্তার সার্থে পুলিশ মিছিল বন্ধ করার অনুরোধ করলেও বিএনপির সমর্থকরা মিছিল চালিয়ে যায় এবং যাত্রাবাড়ী মোড় হয়ে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী অফিসের সামনে এসে শেষ হয়। এসময় পুরো যাত্রাবাড়ী এলাকা বিএনপি কর্মীদের প্রতিবাদী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। স্লোগান থেকে নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের প্রতিহত করার প্রত্যয়ব্যক্ত করেন।
এদিকে নির্বাচনী পথসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে এমন একটি সময় আমরা এই নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছি যখন বাংলাদেশের উপর দিয়ে দুটি মহামারী বয়ে চলছে। একটি হলো আওয়ামী দুর্যোগ আরেকটি হলো করোনা দুর্যোগ। আওয়ামী দূর্যোগ এ জন্য বলছি, আজকে যারা সরকারে আছেন আপনারা জানেন, এ এলাকার মানুষ জানেন, সারা বাংলাদেশ এর মানুষ জানেন ৩০ ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো ২৯ তারিখ রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সে নির্বাচন নস্যাৎ করেছে।
এই সরকার বাংলাদেশের জন্য একটি বিপর্যয় উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই যে রাতের অন্ধকারে তারা ভোট ডাকাতি করেছে এটা কেনো? আমরা আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে তার মুক্তিকে সামনে রেখে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ তখন ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।
তখন আওয়ামী লীগ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড জানালো ৩০ তারিখ যদি মানুষ সকাল থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে বিএনপি ৮০ ভাগ ভোট পাবে আওয়ামী লীগের কোন খবর থাকবে না। তখনই তারা সিদ্ধান্ত নিলো আগের রাতে ভোট ডাকাতি করার। তাদের যদি সামান্যতম আস্থা থাকতো যে জনগণ ভোট দিলে তাদের সামন্য অবস্থান থাকবে তাহলে তারা ভোট ডাকাতি করতো না। ডাকাতি যারা করেছে তারাই প্রমাণ করেছে ভোট হলে বিএনপি ৮০ ভাগ ভোট পেত।
তিনি আরো বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা অনৈতিক সরকার, অবৈধ সারকার, গায়ের জোরের সরকার।
১৭ তারিখ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ওইদিন ভোট নিয়ে যদি আবারো তালবাহানা করা হয়, যদি আবারো আগের রাতে ভোট দিয়ে দেয়া হয় এই নির্বাচন কমিশন এবং এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
হামলায় আহত হন যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রদলের নেতা রফিকুল ইসলাম, সুমন নাথ সরকার, আদনান, প্রান্ত, আসিফ, নজরুল, আলামিন সরকার মন্টি।