ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সাম্প্রদায়িক শক্তি ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে মন্তব্য করে এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে বলেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। শাহবাগে যারা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন করছে, তাদের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, “তারা তথাকথিত পাগল নুরুদের সাথে ধর্ষণবিরোধী অন্দোলনের নামে মদ আর গাঁজা নিয়ে মাঠে নেমেছে। যারা বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ায় তারা ফেইসবুকে ফেইক আইডি বানিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যমে আন্দোলন জমাতে চাইছে। তারা মনে করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোনটিকে একা পেয়েছে। তারা বিশাল বড় নেতা হয়ে গেছে।
“আমি তাদের বলতে চাই, আপনারা হয়ত ভুলে যান নাই, হয়ত পিটনা হজম হয়ে গিয়েছে। আবার সময় এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে ধৃষ্টতা আপনারা দেখিয়েছেন, সেই ধৃষ্টতার সীমা লংঘন করেছেন আপনারা। এর পরে কোনো ধৃষ্টতা দেখালে এই শাহবাগে আপনাদের পাড়াইয়া পিষিয়ে ফেলব। কোনো ধরনের প্রশাসন, কোনো ধরনের মিডিয়াকে আমরা ভয় পাই না।”
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদ দেশে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও নারীর প্রতি সহিংসতার স্থায়ী অবসানের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে নেতা-কমীদের এই নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “আজকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নামে সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আজকে ধর্ষকদের কারা উসকে দেয়, এটা ভাববার বিষয়। কিছু হলেই ছাত্রলীগকে কলুষিত করা হয়। আপনারা সচেতন থাকবেন, কেউ যাতে ছাত্রলীগের কাঁধে ভর করে অন্যায় কাজ করতে না পারে। আপনারা সোচ্চার থাকবেন, যেখানেই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইবে কেউ তাদেরকে আপনারা কঠোর হস্তে দমন করবেন।
“আপনারা বলেন ছাত্রলীগ কেন অস্ত্র তুলে নেয়? ১৯৭১ সালে কিন্তু ছাত্রলীগ অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। এখন পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, আর আমরা বসে থাকব? কখনোই না। আমরা সারা দেশে নেতা-কর্মীদের বলে দিতে চাই, যেখানেই ওই শিবির গংদের পাবেন, যেখানেই ধর্ষকদের পাবেন সেখানেই গণধোলাই দেবেন। বাংলাদেশে কোনো পাকিস্তানি এজেন্টদের স্থান নাই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ধর্ষণ মামলার আসামি ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতাকে পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, “আজকে ১৮ দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষকের বিচারের দাবিতে ঘুরছে। বিচারের জন্য তাকে শেষ পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিতে হয়েছে।
“কিন্তু সেই ধর্ষণের মাস্টারমাইন্ডসহ আসামিদের এখনও গ্রেপ্তার করা হয় নাই। তাহলে আমরা কি ধরে নেব, তারা অনেক পাওয়ারফুল? কখনোই না। আজকে ধিক্কার জানাই নুরু গংদের প্রতি। যারা আমার বোনকে ফেইসবুক লাইভে এসে পতিতা প্রমাণের হুমকি দিয়েছে। আমরা আশা করি, অবিলম্বে আমাদের পুলিশ প্রশাসন তাদের গ্রেপ্তার করবে।”
শাহবাগে যারা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন করছেন, তাদের সমালোচনা করে জয় বলেন, “শাহবাগে যারা আন্দোলন করছে তাদের ৫০ জন লোকও নাই। তারা সেখানে নাচে, গান গায়। ফেইসবুকে দেখলাম তাদের প্রোগ্রামেই অশালীনভাবে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে। তারা একটা শব্দ শুনলেই পাঁচজন নিয়ে মিছিল বের করে ফেলে। কিন্তু কই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমার বোনটার জন্য তো তারা কোনো মিছিল নিয়ে নামল না!
“আজকে ছাত্র ইউনিয়ন নামসর্বস্ব কিছু লোকজন নিয়ে শাহবাগে বসে আমাদের নেত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করে। অথচ আজকে আমাদের নেত্রী আছে বলেই ধর্ষণের বিচার হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দাবি করেছিলাম, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী আগামী সংসদে সেই বিলটি পাস করতে যাচ্ছেন।”
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, “সারা দেশে ধর্ষণের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। মানুষের মাঝ থেকে নীতি-নৈতিকতা উঠে গেছে। সারা দেশে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, বিচার হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের বিচার হচ্ছে না। নুরু গংরা ধর্ষণের ইস্যু নিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। সরকার নিয়ে কেন আপনাদের এত সমস্যা? সবাইকেই তো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু নুরু গংরাই গ্রেপ্তার হয়নি।
“তারা ধর্ষকদের শ্রেণিভুক্ত করতে চায়। দর্শকের তো কোনো দল নাই। কেন কিছু হলেই ছাত্রলীগের প্রতি অভিযোগ আসে? নুর-মামুন কি ছাত্রলীগ করে? সাভারের ঘটনার হত্যাকারীরা কি ছাত্রলীগ করে? ফেনীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা কি ছাত্রলীগ করে? তাহলে কেন ছাত্রলীগের প্রতি আপনাদের টার্গেট? বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ধর্ষকের পক্ষে অবস্থান করেনি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গলা উঁচু করে আমাদের বোন ফাতেমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রত্যেকটি ধর্ষণের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদি হাসান, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাইদুর রহমান হৃদয়, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।