বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ দেশে আসছে কাল। তার জানাজা, দাফন ও পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে রক্ষিত শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ওদিকে গতরাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবার সৌজন্যতা না দেখানোটা ঠিক হয়নি। কারণ ছেলের মৃত্যু সংবাদের পর বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অজ্ঞানের মতো। আমরা সিনিয়র নেতারা কেউই তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাইনি। তার দরজা বন্ধ থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রীর আসার খবরটিও তাকে জানানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের মূল ফটক আগে থেকেই তালাবদ্ধ ছিল। এ ব্যাপারটি সিনিয়র নেতাদের জানা ছিল না। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি যারা শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে দেশের সকল দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন এবং তাকে সমবেদনা জানিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ শোক বইয়ে স্বাক্ষর এবং খালেদা জিয়ার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। যা খালেদা জিয়াকে শক্তি ও সাহস জোগাবে। তিনি বলেন, আপনারা সবাই দোয়া করবেন। যাতে আল্লাহপাক আরাফাত রহমান কোকোকে বেহেস্ত নসিব ও খালেদা জিয়াকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তিনি যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাতে যেন সফল হতে পারেন। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি যেটা চলছে সেটা বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলবে। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গতকাল সকাল থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে ছিল নেতাকর্মীদের ভিড়। খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পেশাজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেই সেখানে যান। এদিকে কার্যালয়ের ভেতরে কূটনীতিকদের জন্য একটি শোক বই খোলা হয়। কূটনীতিকদের মধ্যে- বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, মিশরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ আইজ্জাত, যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি চিফ অব মিশন ডেভিড মিল, চীনা রাষ্ট্রদূত লিং চু, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত খালেদ সুলতান আল উতাইরি, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দ্বীপ চক্রবর্তী, পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার সামিনা মেহতাব, রেডক্রসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডার্কো জর্ডানোভ, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শায়ের মোহাম্মদ, ফ্রান্স কাতার, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতরা স্বাক্ষর করেন। কার্যালয়ের গেটের বাইরে সাধারণ মানুষের জন্য আরেকটি শোকবই খোলা হয়। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ লাইন ধরে সে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে- সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারা সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল আজিম, হেফাজত ইসলামীর ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক নুর হোসেন কাসেমী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. ওয়াকিল আহমেদ প্রমুখ।
তিনদিনের শোক পালন করবে বিএনপি
এদিকে আজ থেকে তিনদিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিএনপি’র দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। বিবৃতিতে বরা হয়, স্বাধীনতার ঘোষক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে আগামী সোম, মঙ্গল ও বুধবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশব্যাপী শোক দিবস পালন করবে। শোক দিবস উপলক্ষে দেশের সকল দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে। আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাদ আসর মরহুম আরাফাত রহমান কোকো’র নামাজে জানাজা এবং আগামী বুধবার সারাদেশে গায়েবানা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে শোক কর্মসূচি পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
লন্ডনে কোকোর জানাজা
লন্ডন প্রতিনিধি জানান, রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত কোকোর গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন তারেক রহমান। তিনি সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। জানাজা পড়ান ফোর্ড স্কয়ার মসজিদের ইমাম মাওলানা সাদিকুর রহমান। জানাজায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র লুতফুর রহমান, কাউন্সিলার ওহিদ আহমেদ ও কমিউনিটির বিভিন্ন স্থরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। শনিবার সকালে মালয়েশিয়া থেকে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর পান তারেক রহমান। প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে বাসায় এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, সুহৃদ ও শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই ছুটে যান তারেক রহমানের বাসায়। তবে অনেকের সঙ্গেই তারেক রহমানের দেখা হয়নি। তারেক রহমান ছিলেন শোকে বিহ্বল। খুবই কম কথা বলেছেন। তবে ভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আরাফাত রহমানের সঙ্গে তার স্মৃতিকথা স্মরণ করে অশ্রুসজল চোখে বারবারই প্রশংসা করছিলেন ছোট ভাইয়ের। শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কোকো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি ইন্তেকাল করেন। কোকোর মৃত্যুর পর এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। মায়ের শারীরিক অবস্থা নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন তারেক। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১২ সালে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলে সেখানে মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় আরাফাত রহমান কোকোর। আর তারেক রহমানের সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয় ২০১৪ সালের জুন মাসে।
এদিকে, বিএনপি’র যুক্তরাজ্য শাখার নেতাকর্মীদের উদ্যোগে শনিবার বাদ মাগরিব পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইন জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।