ঢাকা: এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়াটা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নও জটিলতা তৈরি করতে পারে। কারণ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভর্তিতে সমস্যা না হলেও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া ১৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষার অপেক্ষায় ছিল। তারা প্রস্তুতিও নিয়েছে। এখন পরীক্ষা না নেয়ার ঘোষণায় তারা হয়তো আর পাঠক্রমে থাকবে না। তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করছিলাম এইচএসসি’র পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে।
কিন্তু সেটা না করে পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে এতে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। দীর্ঘদিন এই শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে। হঠাৎ এই ঘোষণায় তারা আবার কর্মহীন হয়ে পড়বে। অনেক শিক্ষার্থী এসএসসি’র ফলের চেয়ে এইচএসসি’র ফল ভালো করে। আবার অনেকে এসএসসি’র ফল ভালো করলেও এইচএসসিতে খারাপ করে। সব সময় ফলাফল তো এক হয় না। যখন পূর্বের ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি’র ফলাফল নির্ধারণ করা হবে তখন মেধাবী যথার্থ যাচাই হবে না। এতে করে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। আমি মনে করি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিষয় কমিয়ে হলেও পরীক্ষা নেয়া দরকার ছিল। এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, এখনো পরীক্ষা নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আগামী দুই-তিন মাসেও যে পরিবেশ সৃষ্টি হবে তাও মনে হচ্ছে না। তবে আমি যেটা বলবো মূল্যায়ন যেন সঠিক হয়। কোনো শিক্ষার্থী যেন বঞ্চিত না হয়। কারণ এইচএসসি পরীক্ষার ফলের এক-দুই পয়েন্টের তারতম্যের জন্য অনেক সময় শিক্ষার্থীরা উচ্চতর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। পরবর্তীতে উচ্চতর ভর্তি প্রক্রিয়া কি হবে সেটাও এখন ভেবে দেখা দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে একটি ঘোষণা আসায় অন্তত শিক্ষার্থী অভিভাবকদের উদ্বেগের অবসান ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা উৎকণ্ঠায় ছিল পরীক্ষা হওয়া নিয়ে। এখন তারা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে। সরকারের এইচএসসি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করেন তিনি। সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, জীবনে পরীক্ষাই সবকিছু নয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। তের লাখ পরীক্ষার্থী, তাদের সঙ্গে দু’জন করে অভিভাবক পরীক্ষাকেন্দ্রে আসলেও ২৬ লাখ অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মচারী, কেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী এতো মানুষের নিরাপত্তা আপনি কীভাবে নিশ্চিত করবেন। এতোগুলো মানুষকে তো আপনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন না। এইচএসসি পরীক্ষা না হলেও তো উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে আমার পরামর্শ হচ্ছে তারা যেন হতাশাগ্রস্ত না হয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে মনোযোগী হয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আমার পরামর্শ হচ্ছে জেএসসি ও এসএসসি’র ফলাফলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফলেরও যেন তারা মূল্যায়ন করে। এবং সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষেরও একটি মূল্যায়ন থাকবে। আমাদের দেশের যে চারটি বোর্ডের পরীক্ষা হয় আমি এই পরীক্ষা ব্যবস্থার বিপক্ষে। আমাদের দেশের মতো পৃথিবীর কোনো দেশে এতো পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয় না। যারা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে তারা যদি শুধুমাত্র ও লেভেল আর এ লেভেল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে তাহলে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের কেন পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষা দিতে হবে। এতো পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।