বাড়ি দখল করে তালা মা-মেয়ের ঠাঁই হলো গোয়ালঘরে !

Slider টপ নিউজ

রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিনিধি: দুই যুগের বেশি সময় পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল জলিল শিকদার-ছালমা দম্পতির। এরপর তাদের সংসারে জুলেখা নামের এক মেয়ের জন্ম হয়। জুলেখার বয়স যখন ১১বছর তখন তার বাবা মারা যায়। এরপর থেকেই অনেক কষ্ট সহ্য করেই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কেটে যাচ্ছিল মা ও মেয়ের।

এরই মাঝে জুলেখার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর লোভ তৈরী হয় চাচাদের। ১৫বছর বয়সী কিশোরী জুলেখাকে গত বছর নিজের ও মায়ের অমতে জোর করে জেঠাতো ভাই কামরুজ্জামানের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। মেয়ে অন্যের ঘরে চলে যাওয়ায় ফের অসহায় হয়ে পড়েন ছালমা আক্তার। স্বামী হারা ছালমার কথা বিবেচনা করে তার বৃদ্ধ বাবা জমি বিক্রি করে ২০লাখ টাকায় তার স্বামীর রেখে যাওয়া জমিতে ৭টি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দেন। উদ্দেশ্য ছিল, এসব ঘর ভাড়া দিয়ে যে আয় হবে তা দিয়েই ছালমার বাকী জীবন আয়েশেই কেটে যাবে।

এদিকে জোর করে কিশোরী জুলেখাকে বিয়ে দেয়ায় কিশোরীটি এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সে। ফলে তাদের সংসারে চিড় ধরে। এ অবস্থায় ফের হিংস্র হয়ে উঠে ছালমার চাচারা। বেশ কিছুদিন পূর্বে ছালমার মা তার বাবার বাড়ীতে বেড়াতে যান, সেখান থেকে ফিরে গত কয়েকমাস পূর্বে দেখেন বাড়ি এসে ঘরে তালাবদ্ধ দেখতে পায়। ঘর তালাবদ্ধ থাকায় ও করোনা ভাইরাস সংক্রমন শুরু হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি আর বেশি দুর এগোয়নি। এসময় মা ছালমা ও মেয়ে জুলেখাকেও বাড়ী থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে বাবার বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়িয়ে কোথাও আশ্রয় না পেয়ে বুধবার সকালে স্বামীর বাড়িতে গেলে ভাসুর-দেবর-ননদদের রোষানলে পড়তে মা ও মেয়েকে।

স্বজনদের সম্পত্তির লোভে এখন ঘরহারা মা ও মেয়ের আশ্রয় হয়েছে বাড়ীর বাহিরে একটি গোয়ালঘরে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের বারতোপা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বারতোপা গ্রামের মাসুদ সিকদারের ছেলে জলিল শিকদারের স্ত্রী ছালমা আক্তার।

ছালমা আক্তার জানান, আমার স্বামীর সম্পত্তি লোভে আমার মেয়ের সাথে জোর করে ভাতিজা সেলিমকে বিয়ে দেন। কিন্তু সেলিম অস্বাভাবিক জীবনযাপন করায় তাদের সম্পর্ক বেশি দিন টিকেনি। এরপর থেকেই আমাদের সম্পত্তিসহ বাড়িটি দখলে নিতে তারা না কৌশল অবলম্বন করেছে।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্যদের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোন সুরাহা হয়নি। স্বামীর রেখে যাওয়া স্মৃতি বুকে নিয়ে বাঁচতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

ছালমার ভাসুর রশিদ শিকদার জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ তৈরী হওয়ায় বাড়ীটি তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিরোধ মিটে গেলেই বাড়ীটি খুলে দেয়া হবে।

এবিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *