শতাব্দী আলম : সেদিন রাত পৌনে তিনটায় বন্ধু আহমেদ সুবির মেসেঞ্জারে জানতে চায় কি করছেন? আমি তখন ফেইসবুকে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করছি। কোনভাবেই চোখে ঘুম আসছিলো না। ফেইসবুকে ‘নোয়াখালি বর্বরতা’ নিয়ে মানুষের প্রতিকৃয়া দেখছিলাম। আমিতো পুরুষোত্তম দাবি করি! এই কথা ভেবে প্রচন্ড ঘৃণা ও ক্ষোভ জন্মেছে মনে। সুবিরও আমার মত ক্ষোভ ও দুঃখে ঘুমাতে পারেনি। তখন সে এই বর্বরতার প্রতিবাদে কলম ধরেছে। আমি তাকে বলি, লিখুন তবে শুধু লেখায় আর চলবে না। আসুন প্রতিরোধ গড়ি। রুখে দাড়াই।
আমরা নিজেরাই পারি এই বর্বরতা রুখতে। আসুন প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। সমাজিক প্রতিরোধ গড়ি। সরকারতো এর বিরুদ্ধে আইন করেই দিয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক বক্তব্যে বলেছেন, এ ধরনের অপকর্মের সাথে যারা যুক্ত, তারা দূস্কৃতিকারী, তাদের অন্য কোন পরিচয় থাকতে পারেনা। এ ধরনের দুস্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। ইতপূর্বে এ ধরনের ঘটনায় অনেক দৃষ্টান্তমূলক শস্তি হয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও নোয়াখালির স্থানীয় এমপি একরামুল ইসলাম সরাসরি ওইসব দুস্কৃতিকারীদের ক্রসফারের দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ যেখানেই বক্তব্য দেবার সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই এই বর্বরতার বিরুদ্ধে বলছেন। তাহলে আমরা কেন পারবো না রুখতে।
আমি ঘুমাতে পারিনি আমার সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে। সন্তান ঘর থেকে স্কুল কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলেই এক অজানা আতংক মনে ভর করে। পুরুষরুপি হায়নারা এখন আর ঘাপটি মেরে থাকে না। সমাজে প্রকাশ্য আস্ফালন করে। দিবালোকে নারিকে তুলে নিচ্ছে। ঘরে স্বামীকে বেঁধে নির্যাতন চালায়। নামাজ পরে কিছুক্ষণ কেঁদেছি। বিধাতার কাছে কায়মন বাক্যে প্রার্থনা করেছি ‘ হে পরওয়ারদিগার মহানুভব আমার সন্তান ও পৃথিবীর সকল নারীকে হেফাজত করুন।’
সমাজে হাতে গনা গুটিকয়েক দুস্কৃতিকারী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। দূবৃত্ত্বরা সবসময় দূর্বল। একবার রুখে দাড়ান দেখবেন এরা পলায়নপর। আমি বিশ^াস করি যারই আমার এই লেখা পরবেন তারাই এসব সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। আমি রুখে দাড়াই। আমি প্রতিবাদ করি। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার আমার প্রয়াত ছোট চাচার এক মাদকাসক্ত ছেলে রুমানের বিরুদ্ধে আমি পুলিশে অভিযোগ করেছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা তার এবং তার পরিবারের ভালর জন্যই করেছি। শুধু তাই না তার সহচর বন্ধু বান্ধবদের এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছি। সাথে সাথে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সর্তক করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও কিন্তু এধরনের দূর্বৃত্ত্ব সন্তানকে নিয়ে বিব্রত দ্বিধাগ্রস্ত। তাই আসুন প্রতিরোধ গড়ি। শুধু লেখা আর বক্তৃতা বিবৃতিতে সমাধান হবে না। ইতমধ্যে আমি আমার আশপাশের স্থানীয় সব শ্রেনীর মুরব্বিকে একথা জানিয়েছি। সবাই আমার সাথে একমত। আমরা আবার সমাজ গড়ে তুলছি। আমাদের সমাজে কোন মাদকসেবি, সন্ত্রাসী আর দূর্বৃত্তের স্থান থাকবেনা। হয় তাকে ভাল হতে হবে নতুবা তাকে সমাজিকভাবে বয়কট করবো। সে মসজিদ মন্দির বিবাহ সামাজিক কোন কিছুতে থাকতে পারবে না। এতেও ক্ষান্ত না হলে সবাই মিলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেব।
আমাদের সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে এরা সাহস পাবে না। আসুন অন্তত: ১০ ঘর মিলে সমাজ গড়ে তুলি। শহর-গ্রাম, পাড়া-মহল্লা সব খানে। স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি পুলিশিং বা আইনশৃঙ্খলা কমিটিগুলো ওইসব দূর্বৃত্ত্বদের দখলে থাকে। আমরা আমাদের সমাজ গড়ে তুলবো। চিরাচরিত সমাজ ব্যবস্থা। এখনো সমাজে ভাল মানুষই বেশী। তাদের মাতব্বরিতেই চলবো। কোন দূর্বৃত্ত্ব বা লুটেরা নেতার নির্দেশে সমাজ চললে এরকম ঘটতেই থাকবে। এসব নিয়ে রাজনীতি করা আমাদের সকলের জন্য ক্ষতি। আসুন ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ি। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে প্রতিরোধ।
এই সন্তান আমাদেরই। তাকে ভালর সাথে রাখা আমাদেরই কর্তব্য। আমাদের বাঙালি চরিতের একধরনের স্বাভাব যতক্ষণ না নিজের ঘারে চাপে ততক্ষন হুশ হয় না। তবে ডাকের মত ডাক হলে এই বাঙালি কতটা বিপ্লবী তা ১৯৭১ সালে বিশ^ দেখেছে। বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান এখনো কানে বাজে। ‘আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে .. আরো একবার গর্জে উঠো বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আমরা স্বাধীন হয়েছি। জাতির পিতার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হায়েনার থাবা থেকে এদেশকে মুক্ত করেছে। প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো আসেনি। যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। সামাজিক স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। সমাজের রন্ধে রন্ধে লুক্কায়িত ওইসব হায়েনাদের প্রতিহত করতে হবে। খুন, ধর্ষন, দূর্নীতি, লুটপাট, দখলবাজি সব কিছুর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে হবে। আমাদের আছেন বঙ্গবন্ধু কণ্যা মানবতার জননী শেখ হাসিনা। তিনিও পিতার মতই অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের বাঘা বাঘা নেতাকে বিচারের মুখোমুখি করেছেন। তিনিতো পথ দেখিয়েছেন। আসুন ঘরে ঘরে প্রতিরোধ গড়ি। দূর্বৃত্ত্বকে প্রতিহত করি। আসুন রুখে দাড়াই।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
০৬/১০/২০২০
টঙ্গী, গাজীপুর