ঢাকা: টিকিটের টোকেন পেতে বেগ, ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়েনি মেয়াদ। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অপারগতা, এজেন্সির কাছেও নেই কোনো পথ। সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফেরার অপেক্ষমাণ অন্তত ৫০ হাজার প্রবাসীর চোখেমুখে এখন শুধু হতাশা। গতকাল পর্যন্তও দৃষ্টি ছিল সরকারের দিকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই দেশের কূটনৈতিক তৎপরতাই হতে পারে সমাধান।
এদিকে, প্রতিদিনের মতো গতকালও রাজধানীর কাওরান বাজারে সৌদি এরাবিয়ান এয়ার লাইন্সের ফটকে ভিড় করেন টিকিট প্রত্যাশীরা। এ সময় শত শত সৌদি আরবগামী প্রবাসী ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে সড়কে অবস্থান নেন।
কিন্তু রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়ক আটকে যাওয়ার শঙ্কায় পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করে। তবে অনিশ্চয়তা না কাটা পর্যন্ত প্রবাসীরা রাজপথ ছাড়বেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ আজ বুধবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি বা বিমান টিকিট রিকনফার্ম করার জন্য এখনো টোকেন পাননি তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২৪ দিন ভিসা ও আকামার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য নির্ধারিত এজেন্সির মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এজেন্সিগুলোর কাছে গেলে তারা বলছেন, এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখনো তারা পাননি। ফলে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন তারা। এ কারণে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।
ভিসা ও আকামার মেয়াদ নিয়ে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই গত ২৩শে সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয়, ২৪শে অক্টোবর পর্যন্ত ভিসা ও আকামার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওইদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের আকামা আরো ২৪ দিন বৈধ থাকবে এবং প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, যে সকল বাংলাদেশি তাদের কর্মস্থল সৌদি আরবে ফিরে যেতে চান তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে সম্মত হয়েছে সৌদি সরকার।
কিন্তু এমন ঘোষণা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বলেই দাবি করছেন প্রবাসীরা। তারা বলছেন, অনলাইন চেক করে দেখা যায় এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে ভিসার মেয়াদ ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে না বাড়লে শত শত বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে বৈধতা হারাবেন। এ বিষয়ে সৌদি আরব এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলে প্রবাসীদের তারা কফিলের (মালিক) সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দেয়। কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকরা বলছেন, এক কোম্পানিতে হাজার হাজার লোক কাজ করে। অনেকে কফিলকে চেনেও না। সেক্ষেত্রে সৌদি আরব এয়ারলাইন্সের এই পরামর্শও অযৌক্তিক বলে দাবি করছেন প্রবাসীরা।
প্রতিদিনের মতো সোনারগাঁও হোটেলের সামনে জড়ো হয়েছিলেন সায়েম রহমান। ভিসা ও আকামার মেয়াদ না বাড়ায় হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, কালকেই শেষদিন। ভিসার মেয়াদ আজও বাড়েনি। আমার সঙ্গে কাজ করে জেদ্দার একটি কোম্পানিতে আরো পাঁচজন আছে। দেশে বেড়াতে এসে আর যেতে পারিনি। বাড়িতে মা, বোন আর ছোটভাই নিয়ে সংসার। সংসার খরচ আর ভাইবোনের পড়ালেখা সবই আমার ইনকামের উপর। এ অবস্থায় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমার বাঁচা কঠিন হয়ে পড়বে। আজকেও আশায় ছিলাম। বাধ্য হয়ে সবার সঙ্গে রাস্তায় নামলাম। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রবাসী সায়েমের মতো আরো এক ভুক্তভোগী মো. ফখরুল আলম জানান, জমিজমা বিক্রি করে সৌদি যাই কাজ করতে। এখন ভিসার মেয়াদ শেষ। সরকার আমাদের দিকটা দেখলো না। আমাদের রেমিট্যান্স দিয়ে দেশ চলে। আর আমাদের কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। সব জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। হারুণ মিয়া নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছেন ৫দিন আগে। এখনও তার সৌদি আরব ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হারুণ মিয়া বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ নাই। কালকে না বাড়লে আমি শেষ হয়ে যাবো। বউ বাচ্চা নিয়ে পথে নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
এদিকে জানা গেছে, প্রবাসীদের দ্রুত কর্মস্থল সৌদি আরবে ফেরাতে এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সাউদিয়া ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। উভয় এয়ারলাইন্সই ফ্লাইটসংখ্যা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের ফেরাতে সৌদি আরবের তিনটি শহরে মোট ১২টি বিশেষ ফ্লাইট ঘোষণা করেছে বিমান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, জেদ্দায় ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১, ৪, ৫ ও ৬ই অক্টোবর, রিয়াদে ২, ৪, ৯ ও ১১ই অক্টোবর এবং দাম্মামে ১, ৩ ও ৫ই অক্টোবর ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। জেদ্দাগামী যেসব যাত্রীর ২২-২৪শে মার্চের মধ্যে টিকিট ছিল তাদের ফ্লাইট হবে ৩০শে সেপ্টেম্বর। ২৫-২৮শে মার্চের টিকিটধারীদের ফ্লাইট ১লা অক্টোবর এবং বুকিংয়ের জন্য বিমানের কাউন্টারে গতকাল যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এছাড়া, ২৯-৩১শে মার্চের টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৪ঠা অক্টোবর, বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে হবে ৩০শে সেপ্টেম্বর। ১লা থেকে ৪ঠা এপ্রিলে যাদের টিকিট ছিল তাদের ফ্লাইট ৫ই অক্টোবর এবং যোগাযোগ করতে হবে ১লা অক্টোবর। ৫-৮ই এপ্রিলের মধ্যে যাদের টিকিট ছিল তাদের ফ্লাইট ৬ই অক্টোবর এবং বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে হবে ২রা অক্টোবর।