সরকারের অনাচার-নিপীড়নের প্রতি ইঙ্গিত করে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ওদের (সরকার) কাছে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর রাষ্ট্রের শক্তি যদি সরে যায় তবে ওরা এতিম হয়ে যাবে। কোনও দিকে তাকিয়ে কূল পাবে না। কোনও আশ্রয়ের জায়গা পাবে না। এতো অন্যায়, এতো পাপ, এতো অত্যাচার ওরা করেছে। সবাই সতর্ক থাকবেন, খুব দ্রুতই সরকার পড়ে যাবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় জিয়া মঞ্চের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সামনে দিন আসছে। আর বেশিদিন কিন্তু এই সরকার নেই। সরকারের পতনের আওয়াজ কিন্তু উঠে গেছে চারিদিকে। এতো অন্যায় ও অবিচার বাংলার মাটি সহ্য করতে পারে না।
এই বাংলার মাটি এমন একটি মাটি, এমন এক দুর্জয় ঘাঁটি, এখানে অত্যাচারী বেশিদিন টিকতে পারে না। ওদের পতনের নমুনা কিন্তু এমসি কলেজের কর্নারের ছাত্রাবাসে নববধূকে সম্ভ্রমহানি করার মধ্যদিয়ে দেখা গেছে। এই সম্ভ্রমহানি কে করেছে? সরকারের ছাত্র সংগঠন। এ ঘটনায় সারাদেশ স্তম্ভিত হয়ে গেছে। শোকাভিভূত। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি, এটা কি স্বাধীন দেশ?
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে এগুলো কিন্তু সরকার পতনের লক্ষণ। এই সমস্ত ঘটনা কিন্তু শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের পতনকে নিশ্চিত করছে। মেজর সিনহার বিচারবহির্ভূত হত্যা পতনের চিহ্ন। প্রতিবন্ধী মেয়েকে সম্ভ্রমহানি সরকারের পতনের লক্ষণ। বেশি দিন নাই কিন্তু, সরকার খুব দ্রুতই পড়ে যাবে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, জনগণের সঙ্গে থাকবেন। আমাদের সব চাইতে রক্ষার প্রাচীর হচ্ছে জনগণ। কারণ আমরা তো সত্যের পক্ষে আছি, ন্যায়ের পক্ষে আছি। আমরা গুলি খাচ্ছি, তারপরও সত্য উচ্চারণ করছি। জুলুমকারীদের পক্ষে জনগণ থাকে না, থাকে মজলুমের সঙ্গে। আমরা উৎপীড়িত, আমাদের পক্ষে জনগণ; আমরা অত্যাচারিত, আমাদের পক্ষে জনগণ।
তিনি বলেন, কথা বলার অধিকার সীমিত করে দিয়েছে সরকার। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারের জায়গা যত বড় হবে, ততোই শেখ হাসিনার পতন ত্বরান্বিত হবে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের অস্ত্রে সুসজ্জিত করে গণতান্ত্রিক কর্মীদের ওপর বারবার আক্রমণ করছে।
রিজভী বলেন, সরকার মিডিয়াকে বাধ্য করছে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে। তাদের অনুগত যারা, সব সময় যারা চেয়ে থাকে একটু ডাল-মাংসে হাত ভেজানোতে, তাদের ব্যবহার করছে সরকার। তাই বিবেক-বুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে কিছু মিডিয়া অপপ্রচারে নেমেছে। একেবারেই বিকৃত নাটককে বটতলার নাটক বলে না? যেটা সাধারণ মানুষ দেখে না, যেটা ‘ইনডেমিনিটি’ নাম দিয়েছে। বোঝা যায় সরকার কোন পর্যায়ে আছে। সরকার ভূত দেখছে, সরকার ভূত দেখে। সরকার বুঝে ফেলেছে, এতো দমন-পীড়ন, এতো নেতাকর্মীদের কারাগারে নেয়া, ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার পরও এরা দমে না। কোনও সুযোগ পেলেই মিছিল-মিটিং প্রতিবাদ সমাবেশ করে এরা।
সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, সূর্যের আলোকে কি পর্দা দিয়ে আটকাতে পারবেন? সূর্যের আলোকে পর্দা দিয়ে, দেয়াল দিয়ে আটকানো যায় না। সূর্য উঠবে, ওর আলো বিস্তৃত হবে। চক্রান্তের ছায়া দিয়ে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের আলো আটকানো যায় না। এ আলো তো দিবালোকের আলো। এই আলো আপনি গোটা রাষ্ট্রকে করায়ত্ব করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে নেভাতে পারবেন না।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ইকবালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, ফিউচার অব বাংলাদেশের সভাপতি শওকত আজিজ প্রমুখ।